ফকিরহাট

ফকিরহাট: বাগেরহাটের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা

বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত ফকিরহাট উপজেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৬০.৬৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২২°৩৯´ থেকে ২২°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৪´ থেকে ৮৯°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে রূপসা ও মোল্লাহাট, দক্ষিণে রামপাল, পূর্বে বাগেরহাট সদর ও চিতলমারী এবং পশ্চিমে বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলায় ঘেরা ফকিরহাটের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭,৭৮৯ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী), যার মধ্যে পুরুষ ৬৯,৪০২ এবং মহিলা ৬৮,৩৮৭। মুসলিম ১০৪৯৫১, হিন্দু ৩২৬২৮, খ্রিস্টান ৫৭ এবং অন্যান্য ১৫৩ জন বাসিন্দা রয়েছে। রূপসা ও ভৈরব নদী এই উপজেলার প্রধান জলাশয়।

  • *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:**

ফকিরহাট থানা ১৮৬৯ সালের ৭ই জুন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১লা আগস্ট থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। এই উপজেলার প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে রয়েছে শিবমন্দির, খানজাহানিয়া মসজিদ এবং নওয়াপাড়ার ঘোষ জমিদার বাড়ি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফকিরহাট উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুভদিয়া ইউনিয়নের দেয়াপাড়া, সিংগাতি, বাহিরদিয়া বাজার, মানসা ইউনিয়নের মানসা এবং পিলজঙ্গ, বটতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। এই যুদ্ধে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

  • *অর্থনীতি ও উন্নয়ন:**

ফকিরহাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, আলু, পান ও শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। নারিকেল, আম, কাঁঠাল, সুপারি এবং কলা প্রধান ফলফলাদি। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও উল্লেখযোগ্য। উপজেলায় অয়েলমিল, রাইসমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, ব্রিকফিল্ড এবং হিমায়িত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র সহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা রয়েছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে বুননশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ এবং বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য। ফকিরহাট, লখপুরহাট, বেতাগা বাজার এবং আট্টাকা বৈশাখী মেলা উপজেলার উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা।

  • *শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:**

শিক্ষার হার ৬২%। উপজেলায় ৪টি কলেজ, ২টি কারিগরি কলেজ, ৩৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৫টি মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজী আজহার আলী কলেজ, শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ, শেখ হাসিনা কারিগরি কলেজ, মুলঘর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাহিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং নলধা মাধ্যমিক বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং বেশ কিছু ক্লিনিক রয়েছে। আশা, ব্র্যাক, কেয়ার এবং প্রদীপন সহ বেশ কিছু এনজিও এখানে কাজ করে।

ফকিরহাট উপজেলা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধিকারী অঞ্চল। এর ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের জীবনযাত্রার ধরণ এই উপজেলাকে অনন্য করে তুলেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ফকিরহাট উপজেলা বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত
  • ১৬০.৬৮ বর্গ কিমি আয়তন
  • ১৯৮৩ সালে থানা থেকে উপজেলায় রুপান্তর
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • কৃষি ও কুটিরশিল্প প্রধান অর্থনৈতিক উৎস