প্রযুক্তি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তি, শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ ‘Techne’ (দক্ষতা, কৌশল) এবং ‘Logos’ (জ্ঞান, ব্যাখ্যা) থেকে। এরিস্টটল প্রথম ‘টেকনোলজিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেন। সহজ কথায়, প্রযুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ যা আমাদের জীবনের সমস্যা সমাধানে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। পাথরের হাতিয়ার থেকে শুরু করে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রা মানব সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে আগুনের ব্যবহার, চাকার আবিষ্কার, কৃষিকাজের উদ্ভাবন প্রযুক্তির প্রাথমিক উদাহরণ। শিল্পবিপ্লব (১৮শ শতক) বাষ্পীয় ইঞ্জিন, কলকারখানার আবির্ভাবের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটায়। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব (১৯শ শতকের শেষভাগ) বৈদ্যুতিক শক্তি, টেলিগ্রাফ, টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনে। বিংশ শতকে কম্পিউটার, ইন্টারনেটের আবির্ভাব ডিজিটাল যুগের সূচনা করে।
প্রযুক্তির প্রভাব:
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
- পরিবেশগত সমস্যা:
প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়, পরিবেশের ক্ষতি।
- সামাজিক পরিবর্তন:
প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তন করে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।
- নৈতিক প্রশ্ন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিন প্রকৌশলী ইত্যাদি প্রযুক্তির নৈতিক দিকগুলো নিয়ে উদ্বেগ।
ভবিষ্যতের প্রযুক্তি:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোপ্রযুক্তি, জিন প্রকৌশলী, মহাকাশ অনুসন্ধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। রে কুর্জওয়েলের মতো ভবিষ্যৎবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা দ্রুত গতিতে অব্যাহত থাকবে।
প্রযুক্তির উন্নয়ন মানুষের জীবনকে সহজ ও উন্নত করে তুললেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। পরিবেশ দূষণ, নৈতিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে দেখা দিতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।