পেঁয়াজ: অশ্রু ও স্বাদের এক অদ্ভুত সমন্বয়
পেঁয়াজ, অ্যালিয়াম সেপা, মানব সভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত একটি উদ্ভিদ। শুধুমাত্র খাবারের মসলা হিসেবে নয়, ঐতিহাসিক, ঔষধি, এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কারণে পেঁয়াজ আমাদের জীবনে বিশেষ স্থান ধারণ করে। ১৭৫৩ সালে বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন। প্রাচীন মিশরেও পেঁয়াজের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
পেঁয়াজ একধরণের দ্বিবর্ষী বা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যদিও সাধারণত বার্ষিক ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। এর ফাঁপা, নীলচে-সবুজ পাতা এবং স্ফীত গোড়া (বাল্ব) চোখে পড়ার মতো। এই বাল্ব ছোট, সংকুচিত কান্ড দিয়ে গঠিত এবং পরিবর্তিত মাংসল শল্কপত্রে ঢাকা থাকে। বিভিন্ন রকমের পেঁয়াজ আছে, যেমন ঝাল, মিষ্টি, তিতা ইত্যাদি। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন বেশি।
পেঁয়াজ বিভিন্ন রোগ এবং পোকার আক্রমণের শিকার হয়, যেমন অনিয়ন ফ্লাই, অনিয়ন এলওর্ম, এবং বিভিন্ন ফাঙ্গাস। পেঁয়াজের স্বাদ এবং গন্ধের জন্য এতে থাকা সালফার যৌগ দায়ী। এই যৌগগুলি চোখে জ্বালা পোড়া ও অশ্রু উৎপন্ন করে।
পেঁয়াজ বিশ্বব্যাপী চাষাবাদ করা হয়। চীন ও ভারত পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রধান দেশ। ভারতে, মহারাষ্ট্রের নাসিক পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দক্ষিণ ভারত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে ও বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়। বাংলাদেশে ও পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। জরুরি সময় পাকিস্তান হয়ে ভারতে আফগানিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
পেঁয়াজ শুধুমাত্র খাবারের উপাদান নয়, এটি ঔষধি গুণাবলীও ধারণ করে। এতে ভিটামিন এ, সি, ই, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। জ্বরে দেহের তাপমাত্রা কমাতে ও পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞান শিক্ষায় পেঁয়াজের কোষ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখানো হয়। পেঁয়াজ কোষের বড় আকারের কারণে কোষ গঠন বুঝতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজের ব্যবহার সীমাহীন। কাঁচা, জমানো, আচার, চূর্ণ, কুঁচি, ভাজা, এবং শুকনো করা পেঁয়াজ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার খাবারে পেঁয়াজ একটি মৌলিক উপাদান।