পানিপথের যুদ্ধ: তিনটি ঐতিহাসিক সংঘর্ষের কাহিনী
ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ নামক স্থানে তিনটি বিখ্যাত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যেগুলো ইতিহাসে পানিপথের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই শহরটি 'উইভিং সিটি অফ ইন্ডিয়া' নামেও পরিচিত। এই তিনটি যুদ্ধের প্রতিটিই ভারতের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছে।
প্রথম পানিপথের যুদ্ধ (১৫২৬): এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এবং দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদীর মধ্যে। বাবরের মাত্র ১২,০০০ সৈন্যের সাথে তুলনামূলকভাবে ইব্রাহিম লোদীর বাহিনীতে ছিল প্রায় ১,০০,০০০ সৈন্য। তবুও বাবর তার উন্নত রণকৌশল, তুলুগুমা এবং আরাবা কৌশল (তুলুগুমা হলো দুই দিক থেকে ঘেরাও এবং আরাবা হলো গরুর গাড়ির সারিবদ্ধ ব্যবহার), এবং বিশেষ করে কামানের ব্যবহারের মাধ্যমে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন। এই যুদ্ধ ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ ছিল।
দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ (১৫৫৬): ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর, মুঘল সম্রাট আকবর এবং হেমু (হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্য) নামে একজন হিন্দু জেনারেল ও আদিল শাহ সুরির প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হেমু আগে দিল্লি জয় করেছিলেন এবং নিজেকে রাজা ঘোষণা করেছিলেন। আকবর এবং তার অভিভাবক বৈরাম খাঁ দিল্লি পুনরুদ্ধারের জন্য এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের মাঝখানে হেমু আহত হন, এবং তার সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আকবর এই যুদ্ধে জয়ী হন এবং মুঘল সাম্রাজ্য আরও সুদৃঢ় হয়।
তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ (১৭৬১): ১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারি এই যুদ্ধ মারাঠা সাম্রাজ্য এবং আফগানিস্তানের অধিপতি আহমদ শাহ আবদালী (আহমদ শাহ দুররানি নামেও পরিচিত) এবং তার জোটবদ্ধ ভারতীয় মুসলিম শাসকদের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ ১৮ শতকের বৃহত্তম যুদ্ধগুলির মধ্যে একটি ছিল। মারাঠারা এই যুদ্ধে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। এ যুদ্ধের পর মারাঠা শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশদের ভারত অধিকারের পথ সহজ হয়ে যায়।
পানিপথের তিনটি যুদ্ধই ভারতের রাজনৈতিক ভূগোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং দেশের ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে সাহায্য করেছে।