পলাশ: রঙের ছোঁয়া, ঐতিহ্যের সাক্ষী
পলাশ (Butea monosperma), একটি মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ যা Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত। এর টকটকে লাল, হলুদ, এবং লালচে কমলা রঙের ফুলের জন্য এটি সর্বত্র পরিচিত। ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে এ গাছ। শীতকালে পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তের আগমনে ফুটে ওঠে অপূর্ব রঙের ফুল। পাতা ত্রিপত্রী, মান্দার গাছের পাতার মতো, কিন্তু আকারে বড়। ফুল ২ থেকে ৪ সে.মি. লম্বা হয়। ফল শিমের মতো।
সংস্কৃতে একে কিংশুক এবং মনিপুরীতে পাঙ গোঙ বলা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া—এসব দেশে পলাশ গাছ দেখা যায়।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে পলাশের গুরুত্ব অপরিসীম। কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি জনপ্রিয় গানে পলাশ ফুলের উল্লেখ রয়েছে। ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটি পলাশ ফুলের মালা…’ -এই দেশাত্মবোধক গানটিতেও পলাশের প্রতীকী ব্যবহার লক্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও গানেও পলাশ ফুল প্রায়শই উল্লেখিত হয়েছে যেমন দোলের গানে এবং ‘ওরে গৃহবাসী’তে ‘রাঙা হাসি রাশি রাশি, অশোকে পলাশে’ এবং ‘ফাগুন হাওয়ায়’ গানে ‘তোমার অশোকে কিংশুকে, অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে’।
পলাশ উপজেলা (নরসিংদী): পলাশ নামটি শুধুমাত্র গাছের নাম নয়; এটি নরসিংদী জেলার একটি উপজেলার নামও। ৯৪.৪৩ বর্গ কিমি আয়তনের এ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২১২৬১২। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে বাস করেন। এখানে শীতলক্ষ্যা নদী প্রবাহিত। ১৯৭৭ সালে পলাশ থানা গঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি একটি উপজেলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার চরণগরদী এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।
পলাশ উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদগুলির মধ্যে রয়েছে পারুলিয়া মসজিদ (১৭১৬), ঘোড়াশাল মিয়াবাড়ী মসজিদ, দেওয়ান শরীফের মাযার, ডাঙ্গা ভোলাবো প্রাচীন কালীবাড়ি, ডাঙ্গার কথুনাথের মন্দির, এবং বরাব কানাই লালের মন্দির। উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি, ব্যবসা, এবং চাকরির উপর নির্ভরশীল।