নোয়াখালী জেলা: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর পূর্ব নাম ছিল ভুলুয়া। ৪২০২.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলাটি ২২°০৭' থেকে ২৩°০৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৩' থেকে ৯১°২৭' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ঢাকা থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উত্তরে কুমিল্লা ও চাঁদপুর, দক্ষিণে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্টগ্রাম ও ফেনী, এবং পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর ও ভোলা জেলা নোয়াখালীর সীমান্তবর্তী।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই নোয়াখালী জেলার মর্যাদা ছিল। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন, এবং কলিন্দা নামে নোয়াখালী অঞ্চলকে একটি জেলায় পরিণত করেন। পরবর্তীতে ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৮ সালে এর নামকরণ হয় নোয়াখালী। নামকরণের পিছনে ১৬৬০ সালে ভয়াবহ বন্যার ফলে খনন করা একটি বিশাল খালের প্রসঙ্গ রয়েছে। নতুন খালের কারণে এ অঞ্চলের নাম হয় নোয়া (নতুন) খাল, যা পরে নোয়াখালী হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা: নোয়াখালী ১৮৩০ সালের ওয়াহাবি আন্দোলন এবং ১৯২০ সালের খিলাফত আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৬ সালের নোয়াখালী দাঙ্গাও ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। মহাত্মা গান্ধী দাঙ্গা পর্যবেক্ষণে নোয়াখালী ভ্রমণ করেন। ১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা আলাদা হয়ে নোয়াখালী জেলা পুনর্গঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালীর ভূমিকা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধা লড়াই হয় এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি: ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী নোয়াখালীর জনসংখ্যা প্রায় ৩৬,২৫,৪৪২ জন। মুসলিম ৯৫.৪৩%, হিন্দু ৪.৫৩% এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর, যদিও মৎস্য চাষ ও রেমিট্যান্সও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: ঢাকা-নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম-নোয়াখালী মহাসড়ক এবং রেল যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান: মাইজদী (জেলা সদর), চৌমুহনী, সোনাইমুড়ি, হাতিয়া, গান্ধী আশ্রম (জয়াগ, সোনাইমুড়ী), নীলকমল (চাটখিল)।