নূর ওয়ালী মেহসুদ: পাকিস্তানি তালেবানের আমির
নূর ওয়ালী মেহসুদ, যিনি আবু মনসুর আসিম নামেও পরিচিত, একজন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত, আলেম এবং আইনজ্ঞ। তিনি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) এর বর্তমান আমির। ১৯৭৮ সালের ২৬শে জুন খাইবার পাখতুনখোয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের তিয়ারজা মহকুমার একটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেহসুদ উপজাতির মেচিখেল উপ-গোষ্ঠী থেকে এসেছেন, যারা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের সারারোঘা মহকুমায় বসবাসকারী একটি পশতুন উপজাতি।
ধর্মীয় শিক্ষা:
মাদ্রিসা সিদ্দিকিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ৯০ এর দশকে নূর ওয়ালী মেহসুদ জামিয়া ইমদাদিয়া, জামিয়া হালেমিয়া, জামিয়া ফারুক-ই-আজম (ফয়সালাবাদ), জামিয়া নুসরাতুল উলূম, জামিয়া আহসান-উল-উলূম (করাচী) এবং জামিয়া ইয়াসিনুল কুরআনে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে আহমেদ শাহ মাসুদের উত্তরজোটের বিরুদ্ধে আফগান তালেবান ও মিত্র জিহাদি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য আফগানিস্তানে যান, যার ফলে তার ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাহত হয়। তিনি আফগান গৃহযুদ্ধ, মাজার-ই-শরীফের যুদ্ধ এবং উত্তর কাবুলের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে পিতার পরামর্শে ধর্মীয় শিক্ষা সম্পন্ন করার জন্য ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং স্নাতক হন। এরপর দুই বছর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের গোরগোর এলাকার মাদ্রাসা ইমদাদ-উল-উলূমে ইসলামি ধর্মতত্ত্ব পড়ান।
টিটিপিতে যোগদান এবং আমির নির্বাচন:
২০০৩ সালে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি পাকিস্তানি তালেবানের মেহসুদ শাখায় যোগ দেন। ২০০৪ সালে ওয়ান্নার যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় তালেবান যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন। তার ধর্মীয় শিক্ষায় পাণ্ডিত্যের জন্য বাইতুল্লাহ মেহসুদ গঠিত তালেবান আদালতে কাজী (বিচারক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাইতুল্লাহ মেহসুদের ডেপুটি হিসেবেও কাজ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। তিনি টিটিপির প্রকাশনা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ২০১৭ সালে ‘ইনকিলাবে মেহসুদ সাউথ ওয়াজিরিস্তান: ফেরেঙ্গি রাজ সে আমেরিকান সমরাজ তক’ (দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে মেহসুদ বিপ্লব: ব্রিটিশ রাজ থেকে মার্কিন সাম্রাজ্য পর্যন্ত) নামে একটি বই লিখেন। ২০১৮ সালে মোল্লা ফজলুল্লাহের মৃত্যুর পর তাকে টিটিপির আমির নির্বাচিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক তালিকাভুক্তি ও প্রভাব:
২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ২০২০ সালে জাতিসংঘের আইএসআইএল এবং আল-কায়েদা নিষেধাজ্ঞা কমিটি নূর ওয়ালী মেহসুদকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। টিটিপির আমির হিসেবে তার নেতৃত্বে টিটিপি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়। তিনি টিটিপিকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা থেকে বিরত রেখে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের উপর হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। জনগণের মাঝে টিটিপির ভাবমূর্তি পুনর্জীবিত করতে এবং ইসলামিক স্টেটের চরমপন্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তার কাজের ফলে টিটিপির বিভিন্ন গ্রুপ একত্রিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
২০২১ সালে তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হলেও পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তিনি টিটিপির মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন। আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেলে পরে আপডেট করা হবে।