নাগরপুর: টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা ২৬২.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি অঞ্চল। ২৩°৫৮´ থেকে ২৪°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৬´ থেকে ৯০°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এই উপজেলার উত্তরে টাঙ্গাইল সদর ও দেলদুয়ার, দক্ষিণে দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) ও সাটুরিয়া, পূর্বে মির্জাপুর ও ধামরাই এবং পশ্চিমে চৌহালি ও শাহজাদপুর উপজেলা অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নাগরপুরের জনসংখ্যা ২৮৮,০৯২; যার মধ্যে পুরুষ ১৩৬,৫৮৫ এবং মহিলা ১৫১,৫০৭। ধর্মীয়ভাবে, বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম (২৬৮,৭২০), অন্যদের মধ্যে হিন্দু (১৯,৩৬৫) এবং খ্রিস্টান (২) রয়েছেন।
নাগরপুরের প্রধান নদী হল যমুনা, ধলেশ্বরী, পুরাতন ধলেশ্বরী ও বংশী। গাইঘাটা খাল ও ভড়ুয়া বিলও উল্লেখযোগ্য। ১৯০৬ সালে নাগরপুর থানা গঠিত হয় এবং ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, নাগরপুরে মুগল আমলে নির্মিত তেবাড়ীয়া মসজিদ এবং বৃন্দাবনচন্দ্র বিগ্রহের অট্টালিকা উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বনগ্রামে ব্যাপক লুঠতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং সারেংপুরে একই পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করে। বড়নগর গ্রামেও তাদের লুটপাটের চিহ্ন রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা নাগরপুর থানা, ঘাসকাউরিয়া, বনগ্রাম, কেদারপুর, কোনড়া প্রভৃতি স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিল। সারেংপুরে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
নাগরপুরে ২৭৯টি মসজিদ এবং ৯০টি মন্দির রয়েছে। সলিমাবাদ মসজিদ, সদামপাড়া মসজিদ এবং গয়হাটা মঠ উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার হার ৪২.৭%; পুরুষ ৪৬.৩% এবং মহিলা ৩৯.৬%। উপজেলায় ৩টি কলেজ, ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। নাগরপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৬), নাগরপুর মহিলা কলেজ (১৯৮৯), গয়হাটা উদয়তারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৯) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অর্থনীতিতে, কৃষি প্রধান পেশা (৬১.৬৩%)। ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ প্রধান ফসল। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, জাম, কুল প্রধান ফল। ৯৯.৩ কিমি পাকা রাস্তা এবং ৬০৯ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ প্রধান কুটিরশিল্প। নাগরপুর হাট, সলিমাবাদ হাট, সহবতপুর হাট, ধুনিপাড়া হাট এবং চৈত্র সংক্রান্তি মেলা উল্লেখযোগ্য। উপজেলার সব ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতায়, কিন্তু ২৮.৪% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। প্রশিকা, আশা, ব্র্যাক উল্লেখযোগ্য এনজিও।