ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন
ধামরাই উপজেলা ঢাকা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ৩০৭.৪১ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৩°৪৯´ থেকে ২৪°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর, দক্ষিণে সিঙ্গাইর ও মানিকগঞ্জ সদর, পূর্বে সাভার এবং পশ্চিমে সাটুরিয়া ও নাগরপুর উপজেলার সাথে এর সীমানা। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ধামরাইয়ের জনসংখ্যা ছিল ৪১২৪১৮, যার মধ্যে পুরুষ ২০৭০৭৮ এবং মহিলা ২০৫৩৪০।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ধামরাইয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন অশোকস্তম্ভ ও মোকাম টোলা এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধামরাইয়ের রোয়াইন বাজার ও আছমিপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। ১৯৭১ সালে ধামরাই বাজার থেকে পাকবাহিনী ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে কালামপুর বাজারের কাছে হত্যা করে, যার স্মৃতি ধামরাইয়ের ইতিহাসে অম্লান থাকবে। কালামপুর বাজারের পশ্চিমে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রশাসন ও অর্থনীতি:
১৯১৪ সালে ধামরাই থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ধামরাইয়ের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষা, আলু এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও, সিরামিকশিল্প, পাটশিল্প, জুতাশিল্প, এ্যালুমিনিয়ামশিল্প, ঔষধশিল্প, বস্ত্রশিল্প, বুননশিল্প, ইটভাটা, করাতকল, চালকল, চামড়া কারখানা, হিমাগার, বিসিক শিল্পনগরী প্রভৃতি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
ধামরাইয়ের শিক্ষার হার ৫০.৮%। এখানে ৬টি কলেজ, ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ধামরাই কলেজ, হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, রোয়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাঠান টুলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে।
সংস্কৃতি ও পর্যটন:
ধামরাইয়ের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। এখানকার বিভিন্ন মেলা, জগন্নাথ রথযাত্রার মেলা, ভক্তের মেলা ও পৌষ সংক্রান্তি মেলা উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।
সাম্প্রতিক উন্নয়ন:
ধামরাই উপজেলা দ্রুত উন্নয়নশীল। পল্লিবিদ্যুতায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে, আর্সেনিক দূষণের সমস্যা এখানে একটি চ্যালেঞ্জ।