ধর্মপাশা উপজেলা: সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ধর্মপাশা উপজেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ৪৯৬.০৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২৪°৪৭´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা, পূর্বে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ এবং পশ্চিমে নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জ উপজেলা ধর্মপাশা উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে। কংশ নদীর শাখা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলাটি সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য পরিচিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ধর্মপাশার ইতিহাস প্রাচীন কাল থেকেই সমৃদ্ধ। ১৬৯১ সালের দিকে মুঘল শাসনামলে হুগলির মহামাণিক্য দত্ত আসাম যাওয়ার পথে ধর্মপাশার কালিদহ নিম্নভূমির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুখাইরে জায়গির ক্রয় করেন, যা বর্তমান সুখাইড় জমিদার বাড়ি। ১৭৮৭ সালে লাউড়ের খাসিয়ারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ধর্মপাশার বংশীকুন্ডা, রামদিঘা ও সেলবারাসসহ বিভিন্ন স্থান লুণ্ঠন করে প্রায় ৮০০ জনকে হত্যা করে। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯২২-২৩ সালে সুখাইড় জমিদার বাড়ি নানকার বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৪২ সালে ধর্মপাশায় একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে থানাটি উপজেলায় উন্নীত হয়। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মধ্যনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হলে ধর্মপাশা উপজেলার আয়তন কমে যায়।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থা:
ধর্মপাশা উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১,৮২,৯৬৯ (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। এই উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওর, শিয়ালদিয়া বিল, পাকেরতলা বিল, ফিরাগাঙ বিল, ধরণি বিল, জালধরা বিল, ধনকুনিয়া বিল, সারদা বিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রধান নদী সুরমা নদী।
অর্থনীতি:
ধর্মপাশার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মাছ চাষ ও রপ্তানি এখানের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ।
দর্শনীয় স্থান:
ধর্মপাশায় রয়েছে সুখাইড় জমিদার বাড়ি, রাজাপুর জমিদার বাড়ি, সেলবারাস জামে মসজিদ, মহিষখলা কালীমন্দির, টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাটের চুনাপাথরের পাহাড় ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
উপজেলায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তবে শিক্ষার হার এখনও উন্নয়নের দিকে ধাবমান।
উপসংহার:
ধর্মপাশা উপজেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলের আরও উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।