১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা: ভারতের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, কলকাতা। একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অম্লান রক্তাক্ত দাগ হিসেবে চিহ্নিত। মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবির প্রেক্ষাপটে এই দাঙ্গা শুরু হয়। 'প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস' হিসেবে ১৬ আগস্ট পালনের ঘোষণার পর হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। কলকাতার উত্তর অংশে লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করতে বাধ্য করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
দক্ষিণে বউবাজার স্ট্রীট, পূর্বে আপার সার্কুলার রোড, উত্তরে বিবেকানন্দ রোড ও পশ্চিমে স্ট্র্যান্ড রোড দ্বারা বেষ্টিত কলকাতার অত্যন্ত জনবহুল এলাকা দাঙ্গার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ওই দিন অক্টোলোনি মনুমেন্টে লীগের বিশাল সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। সরকারি হিসেবে ৪,০০০ লোক নিহত ও ১,০০,০০০ আহত হয়। কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে ২২ তারিখের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
১৯৪৬ সালের এই দাঙ্গার বৈশিষ্ট্য ছিল তার সুসংগঠিত রূপ। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয় দলই দাঙ্গায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। পুলিশের অসহায়ত্ব এবং ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও দাঙ্গার তীব্রতা বাড়িয়ে তুলে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন, ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এই দাঙ্গায় লিপ্ত ছিল। দাঙ্গার পর কলকাতার জীবনযাত্রা সম্পূর্ণরূপে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। খাদ্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং মহামারির ভয়াবহতা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
কলকাতা দাঙ্গা ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ভারত বিভাগের পূর্বে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর বিভেদ ও ঘৃণার প্রতিফলন ঘটায়। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। দাঙ্গার পরবর্তী পরিস্থিতি কল্পনার বাইরে ভয়াবহ ছিল এবং এটি ভারত বিভাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।