দক্ষিণ কোরিয়া: অর্থনৈতিক অলৌকিকের গল্প
পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়া (প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া) বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও প্রভাবশালী দেশ। সিউল, দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভক্তির পর দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অগ্রসর হয়। ১৯৫০-১৯৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপের উপর দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক অলৌকিকের মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
দীর্ঘকাল জাপানের শাসনের অধীনে থাকার পর ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে কোরীয় উপদ্বীপ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। উত্তর কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক, আর দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদী পথে অগ্রসর হয়। এই বিভক্তি এবং পরবর্তী কোরীয় যুদ্ধ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাথমিক বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।
অর্থনৈতিক উত্থান:
যুদ্ধোত্তর দারিদ্র্যের পর দক্ষিণ কোরিয়া রপ্তানিমুখী অর্থনীতির মাধ্যমে দ্রুত উন্নয়ন অর্জন করে। স্যামসাং, এলজি, হুন্দাইয়ের মতো বহুজাতিক কর্পোরেশন বিশ্ববাজারে তাদের স্থান করে নেয়। শিক্ষিত জনশক্তি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং সরকারের সহযোগিতা এই অর্থনৈতিক উত্থানের অন্যতম কারণ। দক্ষিণ কোরিয়া এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ নির্মাতা এবং প্রযুক্তি উৎপাদনকারী।
সংস্কৃতি ও জনপ্রিয়তা:
দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কে-পপ, কে-ড্রামা, এবং কে-ফিল্ম বিশাল ভক্তবৃন্দ তৈরি করেছে। বিটিএস-এর মতো ব্যান্ডের জনপ্রিয়তার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি 'কোরীয় ঢেউ' (Hallyu) নামে পরিচিত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পশ্চিমে পীত সাগর, পূর্বে জাপান সাগর এবং দক্ষিণে কোরিয়া প্রণালী। ২০২২ সালের শেষের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫ কোটি ১৮ লাখ।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ:
দ্রুত বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যা, উত্তর কোরিয়ার সাথে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান। তবে তারা তাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও শিক্ষিত জনশক্তির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।