তুষার: এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য
তুষার, শীতের এক আকর্ষণীয় রূপ। পানির কঠিন অবস্থা, স্ফটিকের মতো ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি হিসেবে আকাশ থেকে নেমে আসে। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় বায়ুমণ্ডলে জমাট বাঁধা জলকণা তুষারে পরিণত হয়। তুষারের বিভিন্ন আকৃতি দেখা যায়; প্লেটলেট, সূঁচ, কলাম, রাইম ইত্যাদি। তুষারপাতের প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিলক্ষিত হয়। মেরু অঞ্চল, উত্তর গোলার্ধের উত্তরাংশ এবং বিশ্বব্যাপী পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত সচরাচর ঘটে। দক্ষিণ গোলার্ধে তুষারপাত মূলত অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।
তুষারপাতের প্রভাব:
তুষারপাত আমাদের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, কৃষিকাজে পানির সরবরাহ, শীতকালীন খেলাধুলা (স্কিইং, স্নোবোর্ডিং) এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব- সবই তুষারের ফলে ঘটে। তুষার শীতকালে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জন্য এক প্রকার অন্তরক স্তর হিসেবে কাজ করে। তুষারের গঠন প্রক্রিয়া বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পদার্থবিদ্যার জটিল মিথস্ক্রিয়ার ফলে হয়।
তুষারের বিভিন্ন ধরণের তুষারঝড়, তুষারধস, তুষারপাত এবং হিমবাহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জলভাগের উপর দিয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হলে তুষারপাত হতে পারে। পাহাড়ের উচ্চতা এবং বায়ু প্রবাহের প্রভাবে তুষারপাত অধিক হয়।
তুষারকণার গঠন:
প্রতিটি তুষারকণা প্রায় ১০^১৯ টি জলের অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে জমাট বেঁধে তুষারকণার বিভিন্ন আকৃতি তৈরি করে। তুষারকণার গঠনে বরফের নিউক্লিয়াস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটি, মরুভূমির ধুলো, জৈবিক কণা আর কৃত্রিমভাবে তৈরি সিলভার আয়োডাইড ইত্যাদি বরফের নিউক্লিয়াস হতে পারে।
বিশ্ব রেকর্ড:
তুষারপাতের বিভিন্ন বিশ্বরেকর্ড রয়েছে। যেমন, সর্বোচ্চ মৌসুমী তুষারপাত (মাউন্ট বেকার, যুক্তরাষ্ট্র), সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক তুষারপাত (সুকায়ু ওনসেন, জাপান) এবং সর্ববৃহৎ তুষারকণা (মাইলস সিটি, মন্টানা)।
উপসংহার:
তুষার প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য, যার প্রভাব মানুষ এবং প্রকৃতির উপর ব্যাপক। এ সম্পর্কে আরও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।