তিতাস: কুমিল্লার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা এবং নদীর নাম
বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত তিতাস উপজেলা তার ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ১০৯.৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৩°৩২´ থেকে ২৩°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪২´ থেকে ৯০°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে হোমনা, দক্ষিণে দাউদকান্দি, পূর্বে মুরাদনগর এবং পশ্চিমে মেঘনা উপজেলা দ্বারা তিতাস উপজেলা বেষ্টিত।
২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দাউদকান্দি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে তিতাস উপজেলা গঠিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ১৮৪৬১৭; যার মধ্যে পুরুষ ৮৭১০০ এবং মহিলা ৯৭৫১৭। মুসলিম জনসংখ্যা ১৭৭৮৪৬, হিন্দু ৬৭৭০ এবং অন্যান্য ১। মেঘনা নদী এ উপজেলার প্রধান জলাশয়।
তিতাসের ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে বাতাকান্দিতে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এছাড়াও, পীর শাহবাজের মাযার শরীফ (গাজীপুর) একটি প্রাচীন নিদর্শন।
শিক্ষার দিক থেকে, উপজেলার গড় শিক্ষার হার ৪৩%। এখানে ১টি কলেজ, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১টি মাদ্রাসা রয়েছে। নারান্দিয়া মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), মজিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), জগৎপুর সাধন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), এবং মঙ্গলাকান্দি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৯) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অর্থনীতিতে কৃষি প্রধান ভূমিকা পালন করে (৪৯.৯৪%)। ধান, পাট, গম এবং ডাল প্রধান কৃষি ফসল। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, চাকরি, কুটির শিল্প (স্বর্ণশিল্প, দারুশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ)। যোগাযোগের জন্য ৬৬ কিমি পাকা রাস্তা, ৩ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ১৬০ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নৌপথের দৈর্ঘ্য ১০৬ কিমি। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে ৮১.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ আছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৯টি রয়েছে।
তিতাস নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আশুগঞ্জের দক্ষিণে মেঘনায় মিলিত হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিমি। মেঘনার একটি শাখানদীর নামও তিতাস। এটি চাতলাপুরে মেঘনা থেকে বেরিয়ে নবীনগরে আবার মেঘনায় মিলিত হয়। তিতাস নদী এবং উপজেলা দুটোই বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত।