তাজ উদ্দিন

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

তাজউদ্দীন আহমদ: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা

তাজউদ্দীন আহমদ (২৩ জুলাই ১৯২৫ - ৩ নভেম্বর ১৯৭৫) বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অম্লান নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অগ্রণী নেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তাকে অন্যান্য তিন জাতীয় নেতার সাথে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:

তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুন্নেসা খান। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন ভূলেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশন, মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (ঢাকা) এবং সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় তিনি যথাক্রমে দ্বাদশ ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬৪ সালে কারাবন্দী অবস্থায় আইন ডিগ্রী লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৩ সাল থেকে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলার পর তাজউদ্দীন আহমদ ভারতে গিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনে কাজ করেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ও মৃত্যু:

মুক্তিযুদ্ধের পর তাজউদ্দীন আহমদ অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।

পরিবার:

তাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাদের চার সন্তান ছিল।

সোহেল তাজ: তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র

সোহেল তাজ (জন্ম: ৫ জানুয়ারী ১৯৭০) স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনি গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ব্যক্তিগত কারণে তিনি ২০০৯ সালে প্রতিমন্ত্রী পদ এবং ২০১২ সালে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
  • তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
  • স্বাধীনতার পর তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • তাকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার সাথে হত্যা করা হয়।
  • সোহেল তাজ তাজউদ্দীন আহমদের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র।
  • সোহেল তাজ একজন রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।