ঢাকার মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ও চ্যালেঞ্জ: একটি বিশ্লেষণ
ঢাকার মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এক হাজার ৪৫০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এর মধ্যে ৯৬% মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও কোনো মামলায় সাজা হয়নি। ২০২১ সালে ৪১৩টি মামলার মধ্যে ১৭টিতে সাজা হয়েছে, বাকিগুলোতে খালাস। ২০২২ সালে ৫৭৬টি মামলার মধ্যে মাত্র ১৪টিতে সাজা হয়েছে এবং ২০২৩ সালে ২১৮টি মামলার মধ্যে ১৩টিতে সাজা হয়েছে। বর্তমানে ৯৬৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
দুটি উল্লেখযোগ্য মামলার উদাহরণ:
- কেয়া আক্তার সাথী নামে এক ভুক্তভোগীকে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সানভির ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস দুবাই পাঠিয়ে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। রামপুরা থানায় মামলা হলেও, বিচার চলাকালে ভুক্তভোগী আসামির সাথে আপস করে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়ে খালাসের জন্য অনুরোধ করেন।
- রিপন নামে আরেক ভুক্তভোগীকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে ২০১৯ সালের ১০ মে জে এইচ চৌধুরী ওভারসিসের আসামি ১২ লাখ টাকা চুক্তি করে আট লাখ টাকা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠায়। পরে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে পাওয়ার জন্য আরও চার লাখ টাকা দিতে হয়। ২০২২ সালের ১৮ মে মামলা দায়েরের পর ভুক্তভোগী ১১ লাখ টাকা পেয়ে আপত্তি প্রত্যাহার করেন।
এই উচ্চ খালাসের হারের পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী মানবপাচারের মূল হোতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা, পাচারকারীদের অর্থশক্তি, সাক্ষীদের সুরক্ষার অভাব এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বিদেশে কাজের প্রতারণা এবং বাদীদের ভয় দেখানোর কথা উল্লেখ করেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চার্জশিটের অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষীর সঠিক উপস্থাপন এবং রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতার অভাবের কথা তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মানবপাচারের মামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঢাকার মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা প্রকাশ করে এই তথ্য। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী।