অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান নামটি একাধিক ব্যক্তিকে নির্দেশ করতে পারে। প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, দুজন ড. আব্দুল মান্নান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। একজন শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা এবং অপরজন ইসলামি রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক।
১. অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী:
এই ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। তিনি কুমিল্লা শহরের থিরাপুকুর পাড় ফ্রি প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডন থেকে পিএইচডি এবং ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সিলেকশান গ্রেড প্রফেসর ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নাইজেরিয়ার বায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ডীন, বিভাগীয় প্রধান, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট, ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান, এম.আই.এস. বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সান্ধ্যকালীন এম.বি.এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে অধ্যাপনার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৩ সালের কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের আয়ূব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের ১১ দফা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ভারতে গমন করে ‘বাংলাদেশ’ পত্রিকার সম্পাদনায় জড়িত ছিলেন। তিনি ভারতের দেরাদুনের মিলিটারী একাডেমীতে গেরিলা যুদ্ধের পুনঃপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মুজিব বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে কুমিল্লার প্রশাসনিক পুনর্গঠনে সহায়তা করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন এবং ইনডেমনিটি বিল বাতিলের আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তিনি জাতীয় ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি (১৯৯৬), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের প্রাক্তন পরিচালক (১৯৯৯) ছিলেন এবং বিভিন্ন সরকারী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।
২. ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান:
এই ড. আব্দুল মান্নান একজন ইসলামি রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক। তিনি এম. এ. মান্নান বা আল্লামা এম. এ. মান্নান নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৬০ সালের ৩রা মার্চ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের খলিফার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক। তিনি ছোবাহানিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা, আহসানুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা এবং গহিরা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও প্রথম সভাপতি ছিলেন। তিনি ইসলামি বইয়ের লেখক ও অনুবাদক হিসেবেও পরিচিত।
৩. অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান:
এই ড. আব্দুল মান্নান ২০১৫-২০১৯ সময়কালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ১২তম চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড্স হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭৮ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল ফেলোশিপের অধীনে চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উচ্চ শিক্ষা প্রশাসন’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৯ সালে ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি শামসুল হক শিক্ষা কমিশনের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারি এলাকার বাসিন্দা।
৪. ড. আব্দুল মান্নান শিকদার:
এই ড. আব্দুল মান্নান শিকদার ১৯৬৪ সালের ২৫শে জুন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কৃতী ছাত্র ছিলেন এবং ১৯৭৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৮১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উচ্চ স্থান অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গ্রেড ১ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি ভ্যাট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং কবি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।