টেকসই

আপডেট: ৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১:০১ এএম

টেকসই উন্নয়ন: একটি বিস্তারিত আলোচনা

টেকসই উন্নয়ন (Sustainable Development) হল এমন একটি ধারণা যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণের উপর জোর দেয়। এই ধারণাটি কেবলমাত্র পরিবেশগত সুরক্ষা নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের সাথেও সম্পর্কিত।

টেকসই উন্নয়নের ইতিহাস:

  • ১৮ শতক: শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ ব্যবহার শুরু হয়।
  • ১৯৬৮: গ্যারেট হার্ডিনের ‘ট্র্যাজেডি অফ কমন্স’ প্রবন্ধে ব্যক্তিবাদী ব্যবসায়িক লক্ষ্যের পরিবেশগত প্রভাব তুলে ধরা হয়।
  • ১৯৭২: জাতিসংঘের প্রথম পরিবেশ সম্মেলন পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরে।
  • ১৯৮৭: ব্রুন্ডল্যান্ড রিপোর্ট (‘আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যত’) টেকসই উন্নয়নের একটি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা প্রদান করে।
  • ১৯৯২: রিও দি জেনেরিওতে পৃথিবী সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়।
  • ১৯৯৮: জন এলকিংটনের ট্রিপল বটম লাইন ধারণা টেকসই উন্নয়নের ধারণাকে সমৃদ্ধ করে।
  • ১৯৯৯: জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বৈশ্বিক আন্দোলন শুরু করে।
  • ২০০০: সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (MDG) চালু হয়।
  • ২০১১: ইউরোপীয় কমিশন কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটিকে স্বীকৃতি দেয়।
  • ২০১৩: বাংলাদেশে আইএসও ২৬০০০ চালু হয়।
  • ২০১৫: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) প্রণয়ন করা হয়।

টেকসই উন্নয়নের মূলনীতি:

টেকসই উন্নয়ন তিনটি মূল স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত:

1. অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যাতে পরিবেশ ও সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

2. সামাজিক ন্যায়বিচার: সমাজের সকল স্তরের মানুষের অধিকার ও কল্যাণের প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়া।

3. পরিবেশগত সুরক্ষা: প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং পরিবেশগত অবক্ষয় রোধ করা।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs):

জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) প্রণয়ন করেছে। এই লক্ষ্যগুলি দারিদ্র্য, ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পানি, জ্বালানি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, অসমতা, নগরায়ন, ভোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, জলজ ও স্থলজ জীবন, শান্তি, ন্যায়বিচার এবং অংশীদারিত্ব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশের অবস্থান:

বাংলাদেশ SDG অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, বিশেষ করে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, সম্পদের অসম বন্টন, ও বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জগুলি এখনও বিদ্যমান।

উপসংহার:

টেকসই উন্নয়ন একটি জটিল ও বহুমাত্রিক ধারণা। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। আমাদের অবশ্যই এমন একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • টেকসই উন্নয়ন হল বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বজায় রাখা।
  • ১৯৮৭ সালের ব্রুন্ডল্যান্ড রিপোর্ট টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞা প্রদান করে।
  • ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) প্রণয়ন করে।
  • টেকসই উন্নয়ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্বের সমন্বয় সাধন করে।
  • বাংলাদেশ SDG অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।