টেকনাফ: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের শহর
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত টেকনাফ উপজেলার সদর শহর হল টেকনাফ। প্রশাসনিক দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হলেও, এর অবস্থানের কারণে এটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিকভাবেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৫১,৪৪০ জন। এর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ২০°৫১′২৮″ উত্তর ৯২°১৭′৫১″ পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৭ মিটার।
২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভা গঠিত হয়, যা ৯টি ওয়ার্ড এবং ১৬টি মহল্লায় বিভক্ত। এই পৌরসভা ৪.০৪ বর্গ কিমি এলাকা পরিচালনা করে। শহরের সাক্ষরতার হার ৩৭.৬%।
ঐতিহাসিক দিক থেকে টেকনাফের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৩০ সালে টেকনাফ থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলা হিসেবে গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় টেকনাফে পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল এবং মুক্তিযোদ্ধারা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। নাইট্যংপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি রয়েছে, যেখানে অনেক বাঙালি নিহত হয়েছিলেন।
টেকনাফে বৌদ্ধ মন্দির (নাইট্যং পাহাড়), ম্যাথিনের কুপ (১৮৫৪), কানা রাজার সুড়ং প্রভৃতি প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেকনাফ বড় মসজিদ, অলিয়াবাদ জামে মসজিদ, টেকনাফ বিষ্ণু মন্দির, টেকনাফ বৌদ্ধ বিহার, চৌধুরীপাড়া বৌদ্ধ বিহার (কীলা)। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টেকনাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫) উল্লেখযোগ্য।
টেকনাফের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অন্যতম। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, মৎস্য ও ব্যবসা। টেকনাফের অর্থনীতিতে সুপারি, পান, মৎস্য এবং লবণের রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, টেকনাফের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ব্র্যাক ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন এনজিও এখানে কাজ করে। টেকনাফের ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য একে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় স্থান করে তুলেছে।