টিপু সুলতান: দক্ষিণ ভারতের এক মহান শাসক ও রণনীতিবিদ
১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যে জন্মগ্রহণকারী টিপু সুলতান (ফতেহ আলী সাহাব টিপু) ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন একজন অসাধারণ সেনানায়ক, প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে। তিনি ‘শের-ই-মহীশূর’ (মহীশূরের বাঘ) উপাধিতে পরিচিত ছিলেন তার অদম্য সাহস ও যুদ্ধকৌশলের জন্য। তার পিতা হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন এবং টিপু তার কাছ থেকে সামরিক তালিম লাভ করেন।
টিপু সুলতানের শাসনামলে মহীশূর রাজ্যের অর্থনীতি ও প্রশাসন উন্নততর হয়। তিনি নতুন মুদ্রাব্যবস্থা, ক্যালেন্ডার এবং ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশে তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার শাসনকালে চন্নপট্টনার খেলনা শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। সামরিক ক্ষেত্রে তিনি রকেট আর্টিলারির উন্নত ব্যবহারের পথিকৃৎ ছিলেন। পল্লীলুরের যুদ্ধ ও শ্রীরঙ্গপট্টনমের ঘেরাওয়ের সময় তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে রকেট ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে টিপু সুলতানের বেশ কিছু যুদ্ধ হয় (মহীশূর যুদ্ধ)। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সাথে তার সম্ভাব্য মিত্রতা ব্রিটিশদের চিন্তিত করে তোলে। অবশেষে ১৭৯৯ সালের ৪ মে শ্রীরঙ্গপট্টনম দুর্গের যুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত ও নিহত হন তিনি। এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় অম্লান রূপে স্মৃতি হিসেবে থাকে।
ধর্মীয় দিক থেকে টিপু সুলতান একজন ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। তবে তার শাসনামলে ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ তাকে ধর্মীয় সহিষ্ণু শাসক হিসাবে দেখলে অন্যরা তাকে ধর্মান্ধ হিসেবে দেখেন। ইতিহাসবিদদের মধ্যেও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
টিপু সুলতানের শাসনামলের ঘটনাবলী, তার ব্যক্তিত্ব ও ইতিহাসের উপর অনেক গ্রন্থ লিখিত হয়েছে। তবে, তার জীবন ও কর্ম নিয়ে বিতর্ক এখনও জারি থাকে। তিনি ইতিহাসে একজন বিতর্কিত কিন্তু মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয়।