জেসমিন আক্তার: এক রোহিঙ্গা ক্রিকেটারের অসাধারণ জীবনযাত্রা
জেসমিন আক্তার, একজন অসাধারণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার, যার জীবনী অসাধারণ উত্থান এবং প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণকারী জেসমিন মায়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যা। তার জন্মের পরপরই তার বাবা মারা যান, এবং অসহায় মায়ের সাথে আরও চার ভাইবোন নিয়ে দারিদ্র্যের জীবনযাপন করতে হয়। প্রায় দশ বছর ধরে কোনো শিক্ষা লাভ না করে, জেসমিন UNHRC প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ডে শরণার্থী হিসেবে বসবাস শুরু করে।
৮ বছর বয়সে ব্র্যাডফোর্ডে পৌঁছে, জেসমিনের জীবনে আসে আরও এক দুর্ঘটনা। ২০১৪ সালে তার মা ও ছোট ভাই বাংলাদেশে গাড়ির দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। মায়ের পক্ষাঘাত হয় এবং তিন মাস ধরে বাংলাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার পরও দীর্ঘ দুই বছর মায়ের চিকিৎসা ও যত্নের বোঝা বহন করতে হয়। ১৩ বছর বয়সেই জেসমিন মায়ের এবং তার তিন ভাইবোনের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। ব্র্যাডফোর্ড ফুটবল ক্লাবে থাকা সত্ত্বেও, সেখানে ছেড়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সম্পূর্ণ বৃত্তিও ত্যাগ করতে হয়।
কিন্তু জেসমিন হাল ছাড়েনি। এক স্কুলের কোচের সাহায্যে, তার ক্রিকেট প্রতিভা আবিষ্কৃত হয়। দ্রুতই তার দক্ষতা সকলের নজরে পড়ে। স্থানীয়ভাবে ছোটদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে এবং Centrepoint নামক দাতব্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। Centrepoint একটি স্ট্রিট চাইল্ড ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ড জাতীয় দল গঠন করে এবং জেসমিনকে দলনেতা করে।
স্ট্রিট চাইল্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, মরিশাস, নেপাল, তানজানিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বঞ্চিত পরিবারের ১৩-১৭ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণ করেছিল। লন্ডন ও কেমব্রিজে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছাড়াও তারা তাদের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করে। জেসমিন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও এই সুযোগ সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। তানজানিয়ার বিরুদ্ধে সহজ জয়ে সেমিফাইনাল পেরিয়ে, ইংল্যান্ডের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলে। যদিও তারা শেষ ওভারে হেরে যায়, তবুও জেসমিন বেন স্টোকসের মতো তার হিরোদের সাথে একই মাঠে খেলার গর্ব বর্ণনা করেন।
২০১৯ সালে বিবিসির ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পান। বর্তমানে তিনি ব্র্যাডফোর্ড কলেজে ব্যবসায় ডিপ্লোমা করছেন এবং ভবিষ্যতে অ্যাকাউন্টেন্সি পড়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ও স্বেচ্ছাসেবার কাজ অব্যাহত রেখে অন্যদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।