মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা: একটি সারসংক্ষেপ
জুড়ী, মৌলভীবাজার জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা, যা ২৬ আগস্ট ২০০৪ সালে বাংলাদেশের ৪৭১তম উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সিলেট শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলার উত্তরে বড়লেখা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম, এবং পশ্চিমে কুলাউড়া উপজেলা অবস্থিত।
জুড়ী নদী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। ঐতিহাসিকভাবে এই নদীর তীরেই মানুষের বসতি স্থাপন শুরু হয়। ১৯ শতকের শেষের দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু আদিবাসী এবং সিলেটের বাইরের অনেক মানুষ জুড়ীতে এসে বসতি স্থাপন করে, বিশেষ করে বেলাগাঁও গ্রামে।
মুক্তিযুদ্ধে জুড়ী ৪ নং সেক্টরের আওতাধীন ছিল। সেক্টর কমান্ডার সি. আর. দত্ত-এর নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালের ২ ও ৩ ডিসেম্বর ফুলতলা, সাগরনাল ও কাপনাপাহাড় এলাকায় যৌথবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর তীব্র লড়াই হয়। ৪ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন সুখ লালের নেতৃত্বে জুড়ী হানাদারমুক্ত হয়।
জুড়ী উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে: জায়ফরনগর, পশ্চিম জুড়ী, পূর্ব জুড়ী, গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল এবং ফুলতলা। উপজেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। ধান, পাট, চা এবং কমলা এই এলাকার প্রধান ফসল। উপজেলার ৯৫% মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত।
শিক্ষার হার ৬৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে তৈয়বুন্নেছা খানম একাডেমি ডিগ্রি কলেজ, জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এবং নয়াবাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। উপজেলায় মসজিদ ১৭০, মন্দির ৪০ এবং গির্জা ১টি রয়েছে।
জুড়ী উপজেলার আয়তন ১৮৬.৩০ বর্গ কিমি এবং জনসংখ্যা ১৪৮৯৫৮। জুড়ী নদী ও হাকালুকি হাওর এখানকার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা, আধা-কাঁচা রাস্তা এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার ৪২.৬%। পানীয় জলের উৎস নলকূপ, ট্যাপ এবং অন্যান্য। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র, হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়াও, ব্র্যাক ও আশা এর মতো এনজিও এখানে কাজ করে। এই উপজেলায় ইউরেনিয়াম ও চীনা মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।