সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম উপজেলা জামালগঞ্জ, প্রকৃতির অপূর্ব রূপ ও সমৃদ্ধ ইতিহাসে পরিপূর্ণ। ৩০৯.৩৮ বর্গ কিমি আয়তনের এ উপজেলা ২৪°৫০´ থেকে ২৫°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৫´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণে খালিয়াজুরী ও দিরাই, পূর্বে সুনামগঞ্জ সদর এবং পশ্চিমে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় ঘেরা। নয়াগাঙ্গ, বাউলাই ও ধনু নদীসহ ছাতিধরা, আইলা, পাঁগনা, খাঁনকিয়াজুরি, কেচুরিয়া ও কচমা বিল জামালগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বর্ধন করে।
১৯৪০ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জামালগঞ্জ ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ১৬৭২৬০; পুরুষ ৮৪৬১২, মহিলা ৮২৬৪৮। মুসলিম ১৩৮৮১৯, হিন্দু ২৮৪১৯, এবং অন্যান্য কয়েকজন। জামালগঞ্জের অর্থনীতিতে কৃষির প্রাধান্য রয়েছে (৭৩.৯২%)। ধান, গম, আলু, ভুট্টা, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মাছ রপ্তানির মাধ্যমেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এছাড়াও বাঁশ ও বেতের কাজ, ফ্লাওয়ার মিল, আইসফ্যাক্টরি প্রভৃতি কুটিরশিল্প ও কলকারখানা রয়েছে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, ১৯৩৭ সালে বেহেলী গ্রামে করুণাসিন্ধু রায়ের নেতৃত্বে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামালগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৯ জুলাই সাচনা বাজারে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে সিরাজুল ইসলাম শহীদ হন। শিক্ষার দিক থেকে, জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়, আলাউদ্দিন মোমোরিয়েল উচ্চ বিদ্যালয়, নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওগ্রাম অষ্টগ্রাম ইসলামীয়া মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য। সাপ্তাহিক ভাটি বাংলা, জামালগঞ্জের ডাক, জামালগঞ্জ পরিক্রমা, সুরমা, স্ফুলিঙ্গ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীও প্রকাশিত হয়।
জামালগঞ্জের প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে বালিপাথর এবং কয়লার কথা উল্লেখ করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে, ১৯৮৭ সালে টর্নেডোতে একজন লোক প্রাণ হারায়, অনেকে আহত হয় এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ব্র্যাক, কেয়ার, বাওপা, ভিশন ২০০০ সহ বিভিন্ন এনজিও জামালগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করছে। সামগ্রিকভাবে, জামালগঞ্জের উন্নয়নশীল অবস্থা, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব একে সুনামগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে স্থাপন করেছে।