জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর: ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ধারক

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, যা দেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, শিল্পকলা ও প্রাকৃতিক ইতিহাসের অমূল্য নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯১৩ সালে ‘ঢাকা জাদুঘর’ নামে ব্রিটিশ শাসনামলে এর যাত্রা শুরু হলেও এর পূর্বে ১৮৫৬ সালে ‘দি ঢাকা নিউজ’ পত্রিকায় ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী হওয়ার পর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। এইচ.ই. স্টেপলটনের উদ্যোগে এবং ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকদের চেষ্টায়, লর্ড কারমাইকেলের অনুদানে ১৯১৩ সালের ৭ই আগস্ট লর্ড কারমাইকেল ঢাকা জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

প্রাথমিকভাবে সচিবালয়ের (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) একটি কক্ষে স্থাপিত হলেও, বর্ধিত সংগ্রহের জন্য ১৯১৫ সালে এটি নিমতলীতে স্থানান্তরিত হয় এবং অবশেষে ১৯৮৩ সালে শাহবাগের বর্তমান স্থানে ৮.৬৩ একর জমির উপর নির্মিত চারতলা ভবনে স্থানান্তরিত হয়।

জাতীয় জাদুঘরের উন্নয়নে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর অবদান অপরিসীম। তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিদর্শন সংগ্রহ করে জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে তার মৃত্যুর পর, ১৯৫১ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধান করে। এনামুল হক ১৯৬২ সালে সহকারী কিউরেটর হিসেবে যোগদান করে ১৯৬৫ সালে কিউরেটর পদে উন্নীত হন। পাকিস্তান আমলে শাহবাগে প্রাদেশিক জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা মিউজিয়াম বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে অনুমোদিত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘর অধ্যাদেশ জারি হয়। বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি পরিচালিত হয়।

জাতীয় জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ, তিনটি অডিটোরিয়াম, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও দুটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণে চারটি শাখা জাদুঘর রয়েছে: সিলেটের ওসমানী জাদুঘর, ঢাকার আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘর এবং ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। জাদুঘরটিতে প্রাকৃতিক ইতিহাস, ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা, জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা এবং সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এর সংগ্রহে প্রায় ৮৬,০০০ নিদর্শন ছিল। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হলো প্রাচীন হিন্দু-বৌদ্ধ ভাস্কর্য, মুদ্রা, মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র এবং বাংলাদেশের নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির প্রতিফলন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০০ দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু
  • ১৯৮৩ সালে শাহবাগে বর্তমান ভবনে স্থানান্তর
  • নলিনীকান্ত ভট্টশালীর অপরিসীম অবদান
  • ৮৬,০০০ এর অধিক নিদর্শন সংগ্রহ
  • চারটি শাখা জাদুঘর নিয়ন্ত্রণে

গণমাধ্যমে - জাতীয় জাদুঘর

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এই প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।