বুয়েটে ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যা: এক নৃশংসতার বর্ণনা
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শের-ই-বাংলা হলে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ছাত্র রাজনীতির নৃশংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।
ঘটনার বিবরণ:
আবরার ফাহাদ (১৯৯৮-২০১৯) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং শেরেবাংলা হলে বসবাস করতেন। ৪ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে মারার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে, ৬ অক্টোবর রাতে, ছাত্রলীগের নেতারা আবরারকে তার রুমে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে মারধর করে। রাত ১২টার দিকে তারা কক্ষ ছেড়ে যায়। আবরারের শ্বাসকষ্ট হলেও, দীর্ঘক্ষণ পর তাকে হল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর তিনটার দিকে তার মৃতদেহ শেরেবাংলা হলের নিচতলায় পাওয়া যায়।
অভিযুক্তরা:
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আবরারের মৃত্যুর কারণ ভোঁতা জিনিসে পিটিয়ে হত্যা বলে নিশ্চিত করা হয়। ২২ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতিক্রিয়া এবং বিচার:
এই ঘটনার পর সারাদেশে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেখা দেয়। বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করে এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। পরবর্তীতে, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার শেষ হয়। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনজন পলাতক রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- আবরার ফাহাদকে তার ফেসবুক পোস্টের কারণে হত্যা করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
- এই ঘটনা ছাত্র রাজনীতির নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে।
- বুয়েট কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।