চিন্ময় লাহিড়ী (১৯২০-১৯৮৪): একজন বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী, যাঁর জন্ম পাবনায় হলেও শৈশব কাটে লক্ষ্ণৌতে। তার পিতা ছিলেন প্রকৌশলী জীবচন্দ্র লাহিড়ী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব তাঁর সঙ্গীত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। লক্ষ্ণৌর মরিস কলেজ অব মিউজিকে সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষা লাভের পর তিনি পন্ডিত রতন ঝঙ্কার, দিলীপ বেদী, খুরশীদ আলী খাঁ এবং ছোটে খাঁ-সহ অনেক বিখ্যাত ওস্তাদের কাছে তালিম নেন। সাঙ্গীতিক পরিবারে জন্ম না হলেও নিজের অদম্য পরিশ্রম ও আগ্রহের মাধ্যমে চিন্ময় বাংলা ও ভারতের সঙ্গীত জগতে এক আলাদা স্থান করে নেন। তাঁর গানে শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের সাথে মিশে ছিল মধুর রস ও আত্মনিবেদন। সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী রচিত ‘নন্দকোষ’ রাগ পরিবেশন করে তিনি সমগ্র ভারতবর্ষে সাড়া ফেলে দেন। ১৯৪৪ সালে এইচ.এম.ভি থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। লক্ষণৌ রেডিও, ঢাকা রেডিও এবং কলকাতা বেতারে কর্মজীবন শুরু করে তিনি পরে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিছুকাল গ্রামোফোন কোম্পানিতে ট্রেনার হিসেবে কাজ করার পর, জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫২ সালে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চিন্ময় লাহিড়ী চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। 'মানদণ্ড' ছবিতে তাঁর প্রথম প্লেব্যাক এবং ‘শাপমোচন’ ছবিতে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘ত্রিবেণী তীর্থপথে কে গাহিল গান’ গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুধু গায়ক হিসেবেই নয়, সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। সরগম-এর কাজে তাঁর অভূতপূর্ব সাফল্য ছিল। রাগকণ্ঠসঙ্গীত ও খেয়াল গানে তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। মরিস কলেজ থেকে তাঁকে ‘সঙ্গীতবিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সঙ্গীত বিষয়ে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে 'মগনগীত ও তানমঞ্জরী' উল্লেখযোগ্য। তিনি বেশ কিছু রাগও সৃষ্টি করেছিলেন, যেমন- শ্যামকোষ, যোগমায়া, প্রভাতী টোড়ী, রজনীকল্যাণ, কুশুমীকল্যাণ, গান্ধারিকা, নাগরঞ্জনী, মঙ্গলতী, শুভ্রা ইত্যাদি।
Loading...
© ২০২৪ অটোমাইন্ড আইটি, সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত.