চিন্ময়কৃষ্ণ দাস: একজন অগ্রগামী নারীবাদী লেখিকা ও সমাজসেবী
উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য ও সমাজে নারীদের অধিকার ও মুক্তির জন্য কাজ করা একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন কৃষ্ণভাবিনী দাস (আনু. ১৮৬২-১৯১৯)। তার জন্ম মুর্শিদাবাদের এক গ্রামে। ১৪ বছর বয়সে তিনি দেবেন্দ্রনাথ দাসের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর, ১৮৭৬ সালে, স্বামীর আইসিএস পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড যান দেবেন্দ্রনাথ। কৃষ্ণভাবিনীও তাঁর সাথে যান। পরীক্ষায় দেবেন্দ্রনাথ ১৭তম স্থান অধিকার করলেও চাকরি পাননি। হতাশায় দেবেন্দ্রনাথ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কৃষ্ণভাবিনী লন্ডনে বেশ কিছু বছর কাটান।
ইংল্যান্ডে বসবাসের সময় কৃষ্ণভাবিনী ইংরেজ নারীদের জীবন ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি সেখানকার নারীদের শিক্ষা, কর্মজীবন ও স্বাধীনতার প্রতি মুগ্ধ হন। এই অভিজ্ঞতা তাকে ‘ইংল্যান্ডে বঙ্গ-মহিলা’ (১৮৮৫) গ্রন্থ রচনায় উৎসাহিত করে। এই গ্রন্থটিতে কৃষ্ণভাবিনী ইংরেজ নারীদের মুক্ত জীবনের তুলনায় বাংলাদেশী নারীদের অশিক্ষিত ও অসহায় অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি তখনকার সমাজের নারীদের প্রতি বৈষম্যের কঠোর সমালোচনা করেন এবং নারীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর জোর দেন।
ইংল্যান্ডে বঙ্গ-মহিলা গ্রন্থটি লন্ডনে প্রশংসিত হয় এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমাজের লজ্জা ও ভয়ের কারণে নিজের নাম উল্লেখ না করেই তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৮৯ সালে কৃষ্ণভাবিনী দেশে ফিরে আসেন এবং ভারতী, সাধনা, প্রবাসী প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখি করতে থাকেন। তিনি নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য জনমত গঠনে অবদান রাখেন। শুধুমাত্র লেখকই নন, কৃষ্ণভাবিনী একজন সমাজ সেবীও ছিলেন। তিনি নিরাশ্রয় ও দুঃস্থ বিধবাদের জন্য আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৯ সালে তার মৃত্যু হয়। কৃষ্ণভাবিনীর জীবন ও কর্ম নারী মুক্তির আন্দোলনে এক অনন্য অধ্যায় স্থাপন করেছে।