রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলা: একটি বিস্তারিত বিবরণ
চারঘাট উপজেলা রাজশাহী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ১৬৪.৫০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°১৪´ থেকে ২৪°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৬´ থেকে ৮৮°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে পুঠিয়া ও পবা, দক্ষিণে বাঘা, পূর্বে বাঘাতিপাড়া ও বাঘা এবং পশ্চিমে পবা উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত।
জনসংখ্যা ও গোষ্ঠীগত বৈচিত্র্য:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চারঘাট উপজেলার জনসংখ্যা ২,০৬,৭৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ১,০৪,১৩৮ এবং মহিলা ১,০২,৬৫০। ধর্মীয়ভাবে, ১,৯৮,১৩৮ জন মুসলিম, ৮,৩৪৫ জন হিন্দু, এবং অল্পসংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে। এছাড়াও এখানে সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
চারঘাট উপজেলা পদ্মা ও বড়াল নদী এবং সালুয়ার বিলের জন্য পরিচিত। এই নদী ও বিল উপজেলার ভৌগোলিক সৌন্দর্য্য ও কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশাসনিক ইতিহাস:
১৯১৯ সালে চারঘাট থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চারঘাটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সারদা পুলিশ একাডেমী এবং রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। বেলপুকুর ব্রিজ (পুঠিয়া) এবং চারঘাটের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ. বি. সিদ্দিকীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধে শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের কথাও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। চারঘাটে গণকবর ও বধ্যভূমি স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি বহন করে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
চারঘাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আখ, আলু, হলুদ, পাট ও খয়ের প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফলের চাষও উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি, নির্মাণ ও কুটির শিল্প উল্লেখযোগ্য। উপজেলার বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম চলছে, তবে পানীয় জলের উৎস হিসেবে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি একটি চ্যালেঞ্জ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
চারঘাটে শিক্ষার হার ৪৭.৭%। উপজেলায় কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, সারদা পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, এবং অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:
চারঘাটের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ ইত্যাদি রয়েছে। চড়কের মেলা ও কালু পীরের মেলা উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সারসংক্ষেপে, চারঘাট উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ অঞ্চল যা কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটায়।