গোমস্তাপুর: ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতির সমন্বয়
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ৩২৮.১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার প্রধান শহর হল রহনপুর। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে শিবগঞ্জ ও নাচোল, পূর্বে নিয়ামতপুর ও নাচোল, এবং পশ্চিমে ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ গোমস্তাপুরের সীমানা।
ঐতিহাসিকভাবে, এই অঞ্চলে রাজার গোমস্তারা বসবাস করতেন বলেই এই উপজেলার নামকরণ। ১৯১৭ সালের ১৫ই জুলাই ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গোমস্তাপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯১৮ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গোমস্তাপুর ৭ নং সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল। রহনপুরে পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প ছিল, যা ১১ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করে। এই দিনটি রহনপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়।
গোমস্তাপুরের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূ-প্রকৃতি এখানকার সংস্কৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এখানে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ২,৪০,১২৩ জন এবং ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল ২৭৫৮২৩। এদের অধিকাংশই মুসলমান, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীও বসবাস করে।
গোমস্তাপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, আলু, গম, ভুট্টা ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। তবে, কিছু কুটির শিল্প যেমন তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদিও বিদ্যমান। রহনপুর পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত।
গোমস্তাপুরের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। রহনপুরের এক গম্বুজ বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, শাহাপুর গড় এর উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ। শিক্ষার দিক থেকে, উপজেলায় বেশ কিছু কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গোমস্তাপুরের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ, শিল্পের বিকাশ এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে গোমস্তাপুরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জিত হবে।