গোপালগঞ্জ: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের আয়তন ১৪৬৮.৭৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১১৭২৪১৫। গোপালগঞ্জ শুধুমাত্র জেলার নাম নয়, একই নামের সদর উপজেলারও নাম। এটি একটি ক শ্রেণীর পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয় এবং ১৯৬৫ সালে গোপালগঞ্জ টাউন কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে গোপালগঞ্জের অতীত রাজগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বকালে মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদার রাণী রাসমনির অধীনে ছিল এ অঞ্চল। রানী রাসমনির নাতি গোপালের নামানুসারেই রাজগঞ্জের নামকরণ হয় গোপালগঞ্জ। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এটি ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার অধীনে ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে ১৮৭০ সালে গোপালগঞ্জ থানা স্থাপিত হয়। ১৯০৯ সালে গোপালগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হয়।
গোপালগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°০'২৪" উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯°৪৯'৪২" পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এটি গাঙ্গেয় জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৯ মিটার। মধুমতি, ঘাঘর, কুমার নদী এবং ওয়াপদা খাল গোপালগঞ্জের উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে গোপালগঞ্জের প্রধান উৎস কৃষি। চিংড়ি চাষ, ধান, গম, সরিষা, তিল, ডাল ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও ব্যবসা, চাকরি, শিল্প ও কুটিরশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গোপালগঞ্জ বিখ্যাত কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া এই জেলায় অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত, যা গোপালগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই জেলায় বহু বধ্যভূমি ও গণকবর আছে।
শিক্ষার দিক থেকে গোপালগঞ্জে বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ। আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রও গোপালগঞ্জে অবস্থিত।