খাজানগর

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

কুষ্টিয়ার খাজানগর: চালের শিল্পনগরী

বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম খাজানগর, কিন্তু এর পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। কারণ খাজানগর শুধু একটি গ্রাম নয়, বরং চাল উৎপাদনের একটি বৃহৎ শিল্পনগরী। চাল উৎপাদন, উন্নত জাতে রূপান্তর ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে এটি দেশের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চালের চাহিদা এই শিল্পনগরী থেকেই মেটানো হয়।

খাজানগর থেকে প্যাকেটজাত উন্নত চাল ৩৮টি দেশে রফতানি করা হয়। খাজানগর-আইলচারা চালশিল্পের চারপাশে ছোট-বড় প্রায় ৮০০টি রাইসমিল এবং দুই হাজারের বেশি চাতাল গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার টন চাল উৎপাদিত হয় এবং ২০-২২ হাজার টন চাল মজুদ রাখার জন্য শত শত গুদামও রয়েছে। এখানকার সাধারণ বাড়িঘরও উৎপাদন, রক্ষণ, সরবরাহ ও বাণিজ্যিক নানা প্রক্রিয়ায় জড়িত। দশ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ শ্রমিক রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন।

খাজানগরের চালশিল্পের ইতিহাস:

সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই স্থানীয় অধিবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা চিলমারী, বাজুমারা ও ফিলিপনগর চরাঞ্চলের অধিবাসীরা বেঁচে থাকার জন্য খাজানগরকেন্দ্রিক চালের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে এখানে প্রথম চালকল-চাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে মনে করা হয়। মিনিকেট ব্র্যান্ডের চালের জন্য খাজানগর বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত চাল ইতালি ও জার্মানিতেও রফতানি হয়।

খাজানগরের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান:

রশিদ অ্যাগ্রো ফুড, খাজানা মিল, স্বর্ণা অটো রাইসমিলসহ ২০-২২টি চালকল দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি মিলে প্রতিদিন ৭০০ টন (বড় মিল) এবং ৫০ টন (ছোট মিল) পর্যন্ত চাল উৎপাদিত হয়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে খাজানগর অবস্থিত। বটতৈল ইউনিয়নে ৩৬ হাজার স্থায়ী বাসিন্দা থাকলেও শুধু খাজানগর গ্রামেই বাস করেন প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মানুষ। ৯০% লোক চালশিল্পের সাথে জড়িত।

সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:

খাজানগরের প্রধান সমস্যা হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নকল ব্র্যান্ডের চালের কারণে মূল উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজধানীর কিছু অসাধু পাইকার নকল ব্র্যান্ডের চাল বাজারজাত করছে।

উৎকৃষ্ট চালের ব্র্যান্ড:

খাজানগরের উৎকৃষ্ট চালের ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে রশিদের মিনিকেট, সিরাজের মিনিকেট, দাদা রাইস, জোয়ার্দার রাইস, নাটোর অটো রাইস, এরফান, মোজাম্মেল, সাগর স্পেশাল, রজনীগন্ধা, সোনার চাবি, সাহেব বাবু, আবুল হোসেন, মুঞ্জুর, মিন্টু ও আনোয়ার স্পেশাল।

উপসংহার:

খাজানগরের চাল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিল্পের অগ্রগতির জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, নকল ব্র্যান্ডের চালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা এই নিবন্ধটি আপডেট করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • কুষ্টিয়া শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খাজানগর
  • চাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত
  • দেশের চাহিদার ৩০% চাল খাজানগর থেকে জোগান
  • ৮০০ রাইসমিল ও দুই হাজারের বেশি চাতাল
  • প্রায় দশ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - খাজানগর