কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ৩৮০.৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি উত্তরে সেনবাগ ও দাগনভুঁইয়া উপজেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর ও সন্দ্বীপ উপজেলা, পূর্বে সোনাগাজী এবং মিরসরাই উপজেলা, এবং পশ্চিমে নোয়াখালী সদর ও কবিরহাট উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ছোট ফেনী নদী ও সন্দ্বীপ চ্যানেল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক তথ্য:
১৮৮৮ সালে কোম্পানীগঞ্জ থানা গঠিত হয় এবং ২ জুলাই ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ব্রিটিশ আমলে যুগিদিয়ায় (বর্তমান সিরাজপুর ইউনিয়ন) একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর ছিল। মুঘল আমলের ঈদাগাজী মসজিদ (চর হাজারি) এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতত্ত্বের স্থান। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যুগিদিয়ায় একটি কারখানা এবং ১৮৫৭ সালে একটি বস্ত্র কল স্থাপন করে। ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীও এখানে বৃহৎ বস্ত্র কল স্থাপন করেছিল। যুগিদিয়া বন্দরের মাধ্যমে এই বস্ত্র এবং লবণসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানি হতো। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা পূর্বে চরাঞ্চল ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করতে না পারলেও রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। ৪ সেপ্টেম্বর বাঞ্ছারাম রোডের স্লুইসগেটের কাছে এক লড়াইয়ে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধগুলিতে সদর বিএলএফ কমান্ডার অহিদুর রহমান অদুদসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কোম্পানীগঞ্জের ১৬ নং স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় একটি গণকবর আছে।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ২৫০,৫৭৯। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৩৭.৮১%), ব্যবসা (১৩.৮৬%), চাকরি (২১.৮১%) ইত্যাদি। বসুরহাট এই উপজেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র। এখানে অসংখ্য ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
শিক্ষা:
কোম্পানীগঞ্জে ৫টি কলেজ, ৭টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯টি মাদ্রাসা ও অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বামনী উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরী হাট কলেজ, কবি জসিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, এবং বামনী কলেজ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপসংহার:
কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে এবং বর্তমানে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আশা করি এই সংক্ষিপ্ত বিবরণটি কোম্পানীগঞ্জ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।