কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: বাংলা ভাষার অমর স্মৃতিস্তম্ভ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্মৃতিস্তম্ভ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থিত এই মিনারটি কেবল একটি স্থাপত্য নয়, বরং বাংলা ভাষার জন্য প্রাণের বিনিময়ে আত্মত্যাগকারী শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতীক। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি, এখানে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, যা বাংলাদেশের ঐক্য ও ভাষাভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
- *প্রথম শহীদ মিনার (১৯৫২):** ১৯৫২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ভাষা আন্দোলনের পর, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা রাতারাতি একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে। ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন এর তত্ত্বাবধানে এবং বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় নির্মিত এই মিনারটি ৬ ফুট চওড়া ও ১০ ফুট উঁচু ছিল। ২৪শে ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউর রহমানের পিতা এবং পরে ২৬শে ফেব্রুয়ারি আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন এর উদ্বোধন করেন। দুঃখজনকভাবে, পুলিশ এই মিনারটি ২৬শে ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করে দেয়।
- *দ্বিতীয় শহীদ মিনার (১৯৫৪):** প্রথমটি ধ্বংসের পর, ১৯৫৪ সালে একই স্থানে একটি নতুন শহীদ মিনার নির্মিত হয়। নাট্যগুরু নুরুল মোমেন এর উদ্বোধন করেন এটি।
- *বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার (১৯৬৩):** ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন সরকারের আমলে বর্তমান স্থান নির্বাচন করা হয় এবং ১৯৫৭ সালে হামিদুর রহমানের নকশায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনের কারণে কাজ বন্ধ হলেও, লেফটিন্যান্ট জেনারেল আযম খানের আমলে পুনরায় কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালের শুরুতে সম্পন্ন হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ সালে আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম এর উদ্বোধন করেন এটি। মূল নকশা থেকে কিছু পরিবর্তন করা হলেও, এটি আজও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ।
- *স্থাপত্য ও বর্ণনা:** ১৪ মিটার উঁচু এই মিনারটি সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। মাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে সুউচ্চ কাঠামো, এবং দুই পাশে সন্তানের প্রতীক স্বরূপ হ্রস্বতর কাঠামো, এটির নকশায় স্পষ্ট।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে এটি আমাদের জাতীয় ঐক্য, ভাষাভালোবাসা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। এটি শুধুমাত্র একটি স্মৃতিস্তম্ভ নয়, বরং একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতীক হিসেবে বাঙালি জাতির অন্তরে গভীরভাবে জড়িত।