কুশিয়ারা: বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী
কুশিয়ারা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের আসাম রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি হয়ে বরাক নদীর একটি শাখা হিসেবে কুশিয়ারা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বরাক নদী সিলেটের সীমান্তস্থিত অমলসিদে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়; একটি সুরমা নদী, অপরটি কুশিয়ারা। কুশিয়ারার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১ কিমি, গড় প্রস্থ ২৫০ মিটার এবং বর্ষা মৌসুমে গড় গভীরতা প্রায় ১০ মিটার। এটি সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
কুশিয়ারা নদী বিভিন্ন উপজেলা যেমন জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ, জগন্নাথপুর ইত্যাদির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা এই নদীর তীরে অবস্থিত। শুষ্ক মৌসুমে বরাকের প্রায় ৮৫% পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় কারণ সুরমা নদীর তলদেশ প্রায় শুকিয়ে যায়। আসামের পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রচুর পানি ও পলি বহন করে নিয়ে আসে, ফলে ধাবক্ষয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। শেরপুরে সর্বোচ্চ ৩,৭০০ এবং সর্বনিম্ন ৩৩ কিউসেক পানি প্রবাহ পরিমাপ করা হয়েছে।
২০২২ সালে, বাংলাদেশ ও ভারত কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি আন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সিলেটে কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর খাল পয়েন্টে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে পারবে। এই চুক্তি কৃষি সেচের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ রহিমপুর খালের সাতটি উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজ করা কঠিন ছিল। চুক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে, এবং বোরো চাষাবাদ ও মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পাবে।
কুশিয়ারা নদী বাংলাদেশের জলবায়ু ও পরিবেশের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নদীর বন্যাপ্রবণতা, ভাঙন, পলিসঞ্চয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। আরও তথ্য উপলব্ধ হলে, আমরা এই লেখাটি আপডেট করব।