কীটনাশক: একটি বিস্তারিত আলোচনা
কীটনাশক হলো এমন বিষাক্ত পদার্থ যা কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। রাসায়নিক কীটনাশক পোকামাকড়, তাদের ডিম এবং লার্ভা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। কৃষিক্ষেত্র, চিকিৎসা, শিল্প ও গৃহস্থালীতে এর ব্যবহার লক্ষণীয়। বিংশ শতাব্দীতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কীটনাশকের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু, শাকসবজির সাথে কীটনাশক মিশে খাওয়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও, প্রায় সব কীটনাশকই জীববৈচিত্র্যের উপর নিরঙ্কুশ প্রভাব ফেলে। অনেক কীটনাশক মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং খাদ্য শৃঙ্খলেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
প্রাকৃতিক কীটনাশকের মধ্যে নিকোটিন এবং নিমের নির্যাস উল্লেখযোগ্য। নিকোটিনভিত্তিক কীটনাশক বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। ভেষজবিহীন কীটনাশক ধাতব পদার্থ, আর্সেনেট, কপার ও ফ্লুরিন যৌগের সমন্বয়ে তৈরি হয়, যেখানে প্রায়ই সালফার ব্যবহার করা হয়।
কীটনাশকের উৎপত্তি ও বিষক্রিয়ার ধরন অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। কার্যকারিতার স্থান অনুসারে কীটনাশক কয়েক প্রকারের। উদাহরণস্বরূপ, DDT একসময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণে অনেক দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে ১৯৫৬ সালে প্রথম সরকারিভাবে কীটনাশক আমদানি করা হয়। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে কীটনাশক সরবরাহ করত। পরে ভর্তুকি কমানো ও বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের পর কীটনাশকের ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪৮ টি কীটনাশক ১৫০ টির অধিক ট্রেডমার্ক নামে বাজারজাত হচ্ছে। পেস্টিসাইড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কীটনাশক ব্যবসার তদারকি করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বিতরণ করে।
জীবাণুঘটিত কীটনাশক রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। এগুলি নির্দিষ্ট কীটপতঙ্গের উপর কার্যকর এবং খাদ্য শৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব কম। তবে এগুলির কার্যকারিতা পরিবেশগত কারণের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে ধানের শিষকাটা লেদাপোকার বিরুদ্ধে ব্যাক্টেরিয়াভিত্তিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই ক্ষেত্রে গবেষণা করে।
সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।