কিবরিয়া: দুই কিবরিয়ার অনন্য পরিচয়
বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে দুই কিবরিয়ার নাম উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা রয়েছে। একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, অন্যজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক ও রাজনীতিক। তাদের জীবন ও কর্মের বর্ণনা নিম্নে তুলে ধরা হল:
- *মোহাম্মদ কিবরিয়া (চিত্রশিল্পী):**
১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ কিবরিয়া। ১৯৪৫ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে (কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস্) ভর্তি হয়ে ১৯৫০ সালে পেইন্টিং-এ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং নওয়াবপুর স্কুলে ড্রয়িং শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে জাপানে পেইন্টিং এবং ছাপচিত্রে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন। ১৯৮৭ সালে চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত হলে ছাপচিত্র বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ২০০০-২০০২ সালের চিত্রকর্মে মিনিমাইজেশনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং মাটির রঙের ব্যবহার বৃদ্ধি করেন। ৭ জুন ২০১১ সালে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
- *শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া (অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, রাজনীতিক):**
১৯৩১ সালের ১ মে হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল কিবরিয়া। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৫৩ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দেড় মাস কারাবরণ করেন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পররাষ্ট্র সার্ভিসে যোগ দেন। বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাস ত্যাগ করে মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন। ২০১০ সালে আইসিটি চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।