কাশী: পবিত্রতার নগরী, ইতিহাসের সাক্ষী
উত্তরপ্রদেশের বারাণসী, বাঙালিদের কাছে অধিক পরিচিত ‘কাশী’ নামে। গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। হিন্দুদের বিশ্বাস, কাশীতে মৃত্যু হলে মুক্তি লাভ হয়। ঋগ্বেদে কাশীকে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। স্কন্দপুরাণেও এর উল্লেখ আছে।
প্রাচীন ইতিহাস:
কাশীর ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে বিস্তৃত। আর্যদের আগমনের আগে থেকেই এখানে মানুষের বসতি ছিল বলে ধারণা করা হয়। মৌর্য যুগে তক্ষশীলা ও পাটলিপুত্রের সাথে এর যোগাযোগ ছিল। গৌতম বুদ্ধ ৫২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সারনাথে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন। মুসলিম শাসনের সময় অনেক মন্দির ধ্বংস হলেও, আধুনিক বারাণসীর বেশিরভাগ ভবন অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম, শৈব সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এছাড়াও অন্যান্য অনেক মন্দির ও ঘাট আছে। হিন্দুদের ‘সপ্তপুরী’র মধ্যে কাশী অন্যতম। জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সুপার্শ্বনাথ, শ্রেয়াংশনাথ ও পার্শ্বনাথের সাথে এর সম্পর্ক আছে।
অর্থনীতি ও সংস্কৃতি:
কাশী রেশম ও সোনা-রুপোর কাজ করা ব্রোকেড, কার্পেট, কাঠের খেলনা, কাচের চুড়ি, হাতির দাঁতের কাজ ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। পর্যটনও এখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। কবীর, রবিদাস, তুলসীদাস, রবিশংকর, বিসমিল্লাহ খান প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে এর গভীর সম্পর্ক আছে। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কাশী গঙ্গা, বরুণা ও অসি নদীর তীরে অবস্থিত। আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ু, উচ্চ জনঘনত্ব ও পর্যটকদের চাপের সম্মুখীন। ২০১১ সালের জনগণনায় শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ লক্ষ।
কাশী: আধ্যাত্মিকতা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন।