কালিয়াকৈর উপজেলা: গাজীপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা
বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কালিয়াকৈর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ। ২৪.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.১৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই উপজেলার উত্তরে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর ও সখিপুর উপজেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলার সাভার ও ধামরাই, পূর্বে গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা অবস্থিত। ১টি পৌরসভা এবং ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৪৮৩৩০৮।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কালিয়াকৈরের ইতিহাস প্রাচীনকালে বিস্তৃত। পাল ও সেন রাজবংশের শাসনামলে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঢোলসমুদ্র, যা পাল রাজা যশোপালের রাজধানী ছিল বলে মনে করা হয়, এখানেই অবস্থিত। কালিয়াকৈর নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ আছে। একটি মতে, কালিয়া নাগ নামের এক বড় সাপের নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়েছে। আরেকটি মতে, কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্রে কারুকাজ করতেন কারিগর 'কালাইকর'দের নাম থেকেই কালিয়াকৈরের নামকরণ হয়েছে।
অর্থনীতি:
কৃষিকাজ এখানকার প্রধান পেশা। ধান, পাট, ইক্ষু, সরিষা প্রধান ফসল। পোলট্রি, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কালিয়াকৈর বাজার উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। বংশাই নদী এ উপজেলার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
কালিয়াকৈরের শিক্ষার হার ৮১.৩১%। এখানে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও কালিয়াকৈর সমৃদ্ধ। ক্রিকেট ও ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতি এখানকার মানুষের আগ্রহ রয়েছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, গোল্ডকাপ, প্রিমিয়ার লিগসহ বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতা এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কালিয়াকৈর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
উপসংহার:
কালিয়াকৈর উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং শিক্ষার এক অনন্য সমন্বয়। এটি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।