কাম্পালা: উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর
উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কাম্পালা দেশটির দক্ষিণ-মধ্যভাগে, ভিক্টোরিয়া হ্রদের উত্তর তীরে, প্রায় ৪০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। একে ‘সাত পাহাড়ের নগরী’ও বলা হয়। কিংবদন্তী অনুযায়ী, এখানে এক সময় ইম্পালা নামক হরিণের মতো প্রাণী বিচরণ করত, যার নামানুসারেই শহরটির নামকরণ। প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের বসবাস কাম্পালায়, যা দেশটির প্রশাসন, বাণিজ্য, পরিবহন ও শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। মার্সারের মতে, এটি পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু:
ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত কাম্পালায় কোনও শুষ্ক মৌসুম নেই। দুটি বর্ষা মৌসুম আছে: আগস্ট থেকে ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি থেকে জুন। বছরভর বৃষ্টিপাত হয়, এপ্রিলে সর্বাধিক। তাপমাত্রা ২৫-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।
শহর পরিকল্পনা ও দর্শনীয় স্থান:
আইনসভা, বাণিজ্যিক ভবন, শিল্প ও আবাসিক এলাকা স্বতন্ত্র সেক্টরে অবস্থিত। পাঁচটি বরোতে বিভক্ত শহরটিতে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উগান্ডা জাদুঘর, জাতীয় নাট্যশালা, নোম্মো জাতীয় চিত্রপ্রদর্শনীগৃহ, কাসুবি সমাধিসমূহ (ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান) প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান আছে। বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়, যেমন কিবুলি পাহাড়ের জাতীয় মসজিদ, শ্রী সনাতন ধর্ম মণ্ডল শিবমন্দির, নামিরেবে ইঙ্গ মহাগির্জা ইত্যাদি, শহরের ধর্মীয় বৈচিত্র্যের পরিচায়ক।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
কাম্পালায় উগান্ডার সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বহু বেসরকারী সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২২), উগান্ডা শহীদদের বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৩), ও এনদেজ্জে বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২) । শহরটি উগান্ডার কৃষিক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু এবং বৃহৎ শিল্পনগরীর মর্যাদাও রয়েছে। চা, কফি, তামাক, চিনি, তুলা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বস্ত্র, সিমেন্ট, ধাতব দ্রব্যাদি উৎপাদনের কারখানা এখানে অবস্থিত।
পরিবহন ও জনজীবন:
ভিক্টোরিয়া হ্রদ অঞ্চলের প্রধান বাজার কাম্পালা। সড়ক ও রেল ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এটি পশ্চিমে কাসেসে থেকে আগত রেলপথের মাধ্যমে কেনিয়ার মোম্বাসা নগরীর সাথে সংযুক্ত। এন্তেব্বে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পোর্ট বেল হ্রদবন্দর এর পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘বোডা-বোডা’ (মোটরসাইকেল), মাটাটু (মিনিবাস), হলুদ ট্যাক্সি - এগুলো কাম্পালার জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা।
ঐতিহাসিক বিবরণ:
অতীতে কাম্পালা এলাকাটি বুগান্ডা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশরা এ অঞ্চল দখল করে এবং কাম্পালাকে প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করে। ১৯০৫ সালে রাজধানী এন্তেব্বে স্থানান্তরিত হয়, ১৯৬২ সালে উগান্ডার স্বাধীনতা লাভের পর আবার কাম্পালা রাজধানী হয়। উগান্ডা-তানজানিয়া যুদ্ধের সময় কাম্পালায় মারাত্মক ক্ষতি হয়। পরে পুনর্নির্মাণের কাজ হয়।