কলকাতার ‘কয়লাঘাট’ নামের উৎপত্তি নিয়ে দুটি প্রধান মত রয়েছে। প্রথমত, ইংরেজদের পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম (বর্তমান জিপিও'র স্থানে) থেকে গঙ্গার দিকে যাওয়ার রাস্তাটিকে কেল্লাঘাট স্ট্রিট বা ওল্ড ফোর্ট ঘাট স্ট্রিট বলা হত। অনেকের ধারণা, ‘কেল্লাঘাট’ অপভ্রংশ হয়ে ‘কয়লাঘাট’ হয়েছে। তবে হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের 'কলিকাতা সেকালের ও একালের' বইতে উল্লেখ আছে যে, এই অনুমান কতটা সঠিক তা নিশ্চিত নয়।
দ্বিতীয় মত অনুসারে, ঘাটটি কয়লা আমদানি-রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হত। দ্বারকানাথ ঠাকুরের কয়লার ব্যবসা এই ঘাট থেকেই শুরু বলে অনুমান করা হয়। কলকাতার ‘কোল-কানেকশন’ তবে অনেক পরের ব্যাপার বলে মনে হয়।
আরেকটি মতামত হল, 'কয়লাঘাট' নামটি আসলে 'কয়াল-ঘাট' থেকে এসেছে। 'কয়াল' শব্দটির অর্থ মাপদার বা জিনিসপত্রের ওজনকারী। মুঘল আমলে কয়াল সরকারি পদ ছিল এবং বাঙালির পদবিও 'কয়াল' হত। কলকাতার কয়লাঘাট অঞ্চলে জিপিও, ব্যাঙ্কশাল ঘাট (যেখানে ওলন্দাজদের শুল্ক আদায়ের অফিস ছিল) এর কাছাকাছি অবস্থানের কারণে, কেল্লার গোলাবারুদ ও জাহাজের মালপত্রের ওজন করার কাজে কয়ালদের প্রয়োজন ছিল। এই কারণেই ‘কয়াল-ঘাট’ নামটি প্রচলিত হতে পারে। হৃষিকেশ, ভাগলপুর, খুলনা এবং কলকাতার ভবানীপুরেও 'কয়ালঘাট' নামে ঘাট রয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসেও কয়লাঘাটা থেকে জাহাজ ছাড়ার কথা উল্লেখ আছে, যেখানে জাহাজের জিনিসপত্রের ওজন করার জন্য কয়ালদের প্রয়োজন ছিল।
অতএব, কয়লাঘাট নামের উৎপত্তি নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই। কেল্লা, কয়লা ব্যবসা এবং কয়ালদের উপস্থিতি - এই তিনটি কারণই সম্ভবত নামের উৎপত্তিতে ভূমিকা পালন করেছে। আরও গবেষণার মাধ্যমে সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।