কমিশন

কমিশন: বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার

বাংলাদেশের ইতিহাস ও উন্নয়নের চিত্রে কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা-পূর্ব থেকে শুরু করে স্বাধীনতোত্তর যুগ পর্যন্ত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতি নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশনগুলি দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা, আইন, রাজনীতি, অর্থনীতি, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

  • *পরিকল্পনা কমিশন:** ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি গঠিত এই কমিশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান। দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন রূপকল্পের আলোকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা, লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (NEC) এর সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
  • *নাথান কমিশন:** ১৯১২ সালের ২৭শে মে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গঠিত। বঙ্গভঙ্গ রদের পর মুসলমানদের অসন্তোষ প্রশমনের লক্ষ্যে এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
  • *নির্বাচন কমিশন:** একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ অনুযায়ী, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সকল নির্বাচন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব এই কমিশনের।
  • *লী কমিশন:** ১৯২৩ সালে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জাতিগত গঠন বিশ্লেষণের জন্য গঠিত। ১৯২৪ সালে তার প্রতিবেদনে উচ্চপদস্থ চাকরিতে ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।
  • *ফ্লাউড কমিশন:** ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভূমি রাজস্ব কমিশন। জমিদারি প্রথা বাতিল ও কৃষকদের ভূমিস্বত্ব পুনরুদ্ধারের বিষয় নিয়ে কাজ করে।
  • *নীল কমিশন:** ১৮৬০ সালে বাংলার নীলচাষ সংক্রান্ত নির্যাতন ও অত্যাচারের তদন্তের জন্য গঠিত। কমিশন রায়তদের উপর অত্যাচারের প্রমাণ পায়, কিন্তু নীলকরদের প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করে।
  • *হান্টার কমিশন:** ১৮৮২ সালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা ও উন্নয়নের জন্য গঠিত। প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেয়।
  • *বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বিমক):** ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, অর্থ বরাদ্দ এবং গবেষণা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে।
  • *কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন:** ১৯১৭ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সংগঠনের উন্নয়নের সুপারিশ করে।
  • *ট্যারিফ কমিশন:** ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, ১৯৯২ সালে পুনর্গঠিত। দেশীয় শিল্পকে অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করে।
  • *আইন কমিশন:** বাংলাদেশের প্রচলিত আইন পুনর্নিরীক্ষণ ও সংস্কারের সুপারিশ করে।
  • *ট্রুথ কমিশন:** ২০০৮ সালে গঠিত। দুর্নীতি দমন ও দায়মুক্তির বিষয়ে কাজ করে।
  • *সাইমন কমিশন:** ১৯২৭ সালে ভারতের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য গঠিত।
  • *যৌথ নদী কমিশন:** ১৯৭২ সালে গঠিত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদী সম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে।
  • *শিক্ষা কমিশন:** বিভিন্ন সময়ে গঠিত শিক্ষা সংস্কারের জন্য।
  • *সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন:** ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য গঠিত।

এই কমিশনগুলির কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শাসন ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিভিন্ন কালীন প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে, এদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করা অপরিহার্য।

মূল তথ্যাবলী:

  • পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল পরিকল্পক
  • নাথান কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ
  • নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ক
  • শিক্ষা কমিশনগুলি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
  • আইন কমিশন দেশের আইন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে