মেজর এম. এ. জলিল: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অসাধারণ নায়ক
মেজর এম. এ. জলিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অম্লান নাম। তার বীরত্ব, সাহস, এবং দেশপ্রেমের গল্প আজও অনুপ্রেরণার উৎস। ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বরিশালের উজিরপুরে জন্মগ্রহণকারী জলিল, ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি নবম সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বে ৯ নং সেক্টর বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও যশোরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়। তিনি একটি বিশাল মুক্তিবাহিনী গঠন করেন, যার সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০,০০০। তার অধীনে গড়ে ওঠে ১১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তিনি বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড নামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নৌবাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাতক্ষীরা, খুলনা, এবং বরিশাল মুক্ত করার যুদ্ধে তার নেতৃত্ব অতুলনীয় ছিল। খুলনায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন, যদিও তাকে ভারতীয় মিত্র বাহিনী দ্বারা পিছনে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হন।
মুক্তিযুদ্ধের পর, জলিল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন। ১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বীরত্ব ও ত্যাগের স্মৃতি আজও বাংলাদেশের জনগণের মনে জীবন্ত।