এমপক্স (পূর্বে মাঙ্কিপক্স বা বাঁদরবসন্ত নামে পরিচিত) একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPXV) দ্বারা সৃষ্ট। এটি মানুষসহ কিছু প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের একটি ল্যাবরেটরিতে বানরের মধ্যে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মানুষের দেহে প্রথম এ রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়।
এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি অন্তর্ভুক্ত। ফুসকুড়ি পরে ফোস্কায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত কঠিন আবরণ তৈরি করে। উপসর্গ সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক।
এমপক্স প্রাণীর মাংস, পশুর কামড় বা আঁচড়, শরীরের তরল, দূষিত বস্তু, বা সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি প্রধানত আফ্রিকার নির্দিষ্ট তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী ও হিংস্র প্রাণীর মধ্যে ছড়ায়। ভাইরাসের ডিএনএ পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা যায়।
গুটিবসন্তের টিকা এমপক্স প্রতিরোধে ৮৫% কার্যকর। ২০১৯ সালে জিনিওস নামে একটি বাঁদরবসন্তের প্রতিষেধক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত হয়। টেকোভিরিম্যাট নামের একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এমপক্স চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি অনুমোদিত। ব্রিনসিডোফোভিরও কার্যকরী। আফ্রিকায় চিকিৎসা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০-১১% পর্যন্ত।
২০২২ সালে এমপক্সের প্রাদুর্ভাব আফ্রিকার বাইরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যে শুরু হয়ে এটি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের আগস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এমপক্সের জন্য জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি সতর্কতা জারি করে। এমপক্সের নতুন ধরণ (Clade I) ২০২৩ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে শনাক্ত হয় এবং ২০২৪ সালের আগস্টে WHO আবার জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।