উরুগুয়ে: দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট রত্ন
দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মাঝে অবস্থিত একটি স্বাধীন দেশ। এটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ (সুরিনামের পর)। এর আনুষ্ঠানিক নাম “উরুগুয়ের পূর্ব প্রজাতন্ত্র” (República Oriental del Uruguay)। মন্টেভিডিও এই দেশের রাজধানী ও প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত উরুগুয়ে স্পেনীয় উপনিবেশের অংশ ছিল। পর্তুগিজদের অধীনেও কিছুকাল কাটে। ১৮১১ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘর্ষের পর ১৮২৮ সালে উরুগুয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। জোসে জেরভাসিও আর্তিগাসকে উরুগুয়ের জাতীয় নায়ক হিসেবে মনে করা হয়। দেশটির ইতিহাসে গৃহযুদ্ধ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণের ঘটনা প্রচুর। ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, যা ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত চলে।
ভূগোল ও জনসংখ্যা:
উরুগুয়ে মূলত সমতল ভূমি ও ছোট ছোট পাহাড়ের দেশ। এর উপকূল রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর ও রিও ডি লা প্লাটা নদীর তীরে। মন্টেভিডিও মহানগরীতে দেশের প্রায় ৫০% মানুষ বাস করে। উরুগুয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। ১৯৬৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে প্রায় ৩,২০,০০০ লোক উরুগুয়ে ত্যাগ করেছিল, কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে অভিবাসনের হার বেড়েছে।
অর্থনীতি:
উরুগুয়ের অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ ও গবাদি পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। গরুর মাংস উরুগুয়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পর্যটন শিল্পও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। উরুগুয়ে ৫৬-৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্থুল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে বিশ্বের ৭৫তম স্থানে অবস্থান করে।
উল্লেখযোগ্য দিক:
উরুগুয়ে প্রথম দেশ হিসাবে গাঁজা বৈধ করেছে। দেশটি সমকামী বিবাহ এবং গর্ভপাতকেও বৈধ করেছে। উরুগুয়ে বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ সুশাসন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নত অবকাঠামোর জন্য। এছাড়াও, উরুগুয়ের ফুটবল দল বিশ্বের অন্যতম সফল। তারা ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছে।
সংক্ষেপে:
উরুগুয়ে একটি ছোট কিন্তু উন্নত দেশ যা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সুন্দর প্রকৃতি এবং গর্বিত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত।