ইরান: ঐতিহ্যের ধারক, আধুনিকতার সন্ধানী
পশ্চিম এশিয়ার একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইরান। ঐতিহাসিকভাবে পারস্য নামে পরিচিত এই দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। উত্তর-পশ্চিমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, উত্তর-পূর্বে তুর্কমেনিস্তান, পূর্বে আফগানিস্তান, দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তান, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগর এবং পশ্চিমে তুরস্ক ও ইরাক দেশটির সীমান্তবর্তী। ১৬,৪৮,১৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তদশ বৃহত্তম রাষ্ট্র। ৮৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশ বিশ্বের ১৭তম জনবহুল দেশ। তেহরান ইরানের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর।
ঐতিহাসিক গৌরব:
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য পারস্যের কেন্দ্র ছিল বর্তমান ইরান। প্রায় ২০০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে “ইরান” নামে ডাকত। আকামেনিদ সাম্রাজ্য, পারথীয় সাম্রাজ্য, সাসানীয় সাম্রাজ্য- এই সব সাম্রাজ্য ইতিহাসের পাতায় অম্লান স্বর্ণাক্ষরে লেখা। ১৯৩৫ সালে ইরানের শাসক আনুষ্ঠানিকভাবে “ইরান” নামটি ব্যবহারের অনুরোধ জানান। ১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থা চলে। ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।
ভৌগোলিক বৈচিত্র্য:
ইরান পর্বতময় একটি দেশ। হিমালয়ের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ ইরানে অবস্থিত। এখানে আছে মরুভূমি, উর্বর উপত্যকা, কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল এবং পারস্য উপসাগরের তীরে বন্দর। দেশটিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার রয়েছে।
সংস্কৃতি ও জনসংখ্যা:
ইরান একটি বহু-সাংস্কৃতিক দেশ। পারস্য, আজারবাইজান, কুর্দিস্তান এবং লোরি প্রধান জাতিগোষ্ঠী। ধর্মীয়ভাবে বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম (শিয়া মুসলমান), তবে খ্রিস্টান, ইহুদি, জরথুস্ত্রীসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও রয়েছে। ফার্সি ভাষা ইরানের রাষ্ট্রভাষা।
রাজনীতি ও অর্থনীতি:
ইরান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র। আলি খামেনেই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি রাষ্ট্রপতি। ইরানের অর্থনীতি তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। তবে কৃষি, শিল্প (পেট্রোকেমিক্যাল, গাড়ি, টেক্সটাইল প্রভৃতি) এবং সেবা খাতও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ:
ইরান বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ভূমিকম্প, মরুকরণ, জল সংকট, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা- এইসব সমস্যা দেশটির উন্নয়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে। তবে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ইরান তার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।