বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিতর্কের ঝড় তুলেছে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন’। দুই বছর ধরে ঝুলে থাকা ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) নীতিমালা সংশোধন না করেই বিটিআরসি এই নতুন গাইডলাইন চালু করতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে একচেটিয়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের টেলিযোগাযোগ খাতে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং ইন্টারনেট সেবার দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০০৮ সালে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ অনুযায়ী বিটিআরসি এনটিটিএন নীতিমালা করেছিল। গত দুই বছর ধরে এ নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব ঝুলে থাকার পর এখন হঠাৎ ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন’ আনায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই দুই নীতিমালার মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকায় এটি টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বিশেষ করে, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে।
দেশীয় উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন যে, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের হাতে দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসা তুলে দিতে চাইছে। এনটিটিএন নীতিমালা সংশোধন না করেই ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন’ অনুমোদন করার উদ্যোগ সঠিক নয়। ২৯ ডিসেম্বর কমিশন সভায় গাইডলাইন অনুমোদনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর বিটিআরসি হঠাৎ করে গাইডলাইনের খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এতে মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে, টেলিযোগাযোগ খাতের সকল সেবার নিয়ন্ত্রণ মাত্র তিনটি মোবাইল অপারেটরের হাতে চলে যেতে পারে। ২০০৮ সালের আগে একক মোবাইল অপারেটরের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। ওই সময় প্রতি সার্কিট ট্রান্সমিশন সেবার জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হতো। সাধারণ মানুষও তখন প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতেন।
টেলিযোগাোগ খাতের বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার মনে করেন ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন’ এনটিটিএন নীতিমালা সংশোধনের বিকল্প নয়। তড়িঘড়ি করে এই নতুন গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে তাদের আশঙ্কা।