ইতিহাস: অতীতের স্মৃতি, বর্তমানের দর্শন
জর্জ সান্তায়ানার কথায়, ‘অতীতকে যারা মনে রাখতে পারে না তারা এর পুনরাবৃত্তি করার দোষে দুষ্ট।’ ইতিহাস হলো অতীতের বৃত্তান্ত, কালানুক্রমিক ঘটনার লিখন, বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন। কিন্তু বেনেদেত্তো ক্রোচের মতে, ইতিহাস হলো বর্তমান; কারণ অতীতের ঘটনাগুলোই বর্তমানে ইতিহাস হিসেবে অধ্যয়ন করা হয়। এটি মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের এক সেতুবন্ধন, যেখানে উভয় শাস্ত্রের পদ্ধতি ও উপাদান ব্যবহৃত হয়। ইতিহাসের মূল উদ্দেশ্য হলো অতীতকে বর্তমানের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা।
ইতিহাসের বিভিন্ন শাখা:
দিনপঞ্জি, ইতিহাস লিখন (হিস্ট্রিওগ্রাফি), কুলজি শাস্ত্র, প্যালিওগ্রাফি, ক্লায়োমেট্রিক্স ইত্যাদি। ইতিহাসবেত্তারা লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক উৎস বিশ্লেষণ করেন, যদিও লিখিত উপাদান সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। ইংরেজি ‘হিস্ট্রি’ শব্দটি গ্রিক ও লাতিন শব্দ ‘ἱστορία’ (Historia) থেকে এসেছে, যার অর্থ সত্যানুসন্ধান। বাংলা ‘ইতিহাস’ শব্দটি ‘ইতিহ’ (ঐতিহ্য) থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘এমনটিই ছিল বা এমনটিই ঘটেছিল’।
ইতিহাস লিখনধারার বেশ কিছু অর্থ রয়েছে: ইতিহাসের সৃষ্টি, ইতিহাস লিখনরীতির বিষয়বস্তু এবং ইতিহাসের দর্শন। ইতিহাসের দর্শন দর্শনের একটি শাখা যেখানে ঘটনাবলির গুরুত্ব, মানবীয় ইতিহাসের বিকাশের সম্ভাব্য পরমকারণমূলক সমাপ্তি এবং এর পদ্ধতিতে নকশা, কারণ, নীতি, বা সমাপ্তি আছে কিনা তা বিবেচনা করা হয়। ইতিহাস একক বর্ণনা নাকি ধারাবাহিক বর্ণনা হবে তা নিয়ে ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে বিতর্ক আছে।
ইতিহাসের বিভিন্ন ক্ষেত্র:
নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক যুগ, অর্থনৈতিক ইতিহাস, ধর্মের ইতিহাস, পরিবেশগত ইতিহাস, বিশ্বের ইতিহাস, সংস্কৃতির ইতিহাস, সেনাবাহিনীর ইতিহাস, প্রাগৈতিহাস ইত্যাদি। ইতিহাসবেত্তারা ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কেন ঘটেছিল তা জানার জন্য ভূগোল অধ্যয়ন করেন।
ছদ্মইতিহাস হলো ঐতিহাসিক প্রকৃতির লেখা যার সারমর্ম ঐতিহাসিক লিখনধারা থেকে ভিন্ন এবং পরিণতি ভিন্ন হয়। এটি ঐতিহাসিক নেতিবাচকতার সাথে সম্পৃক্ত এবং কল্পনাপ্রসূত প্রমাণের মাধ্যমে উপসংহার টেনে থাকে।
প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানব সভ্যতা:
প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানবসভ্যতা চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রাচীন বিশ্বের সকল সভ্যতা নদীর উপত্যকায় উদ্ভূত হয়েছিল, যেমন- সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, অ্যাসিরীয় (দজলা-ফুরাত), প্রাচীন মিশরীয় (নীলনদ) এবং সিন্ধু সভ্যতা (সিন্ধু নদী)। পূর্ববর্তী ঘটনার উপর নির্ভর করে ঐতিহাসিক যুগ নির্ধারণ করা হয় এবং এর ফলে পূর্ববর্তী সময়ের মৌলিক ধারণা ও বিচারবুদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। ইতিহাস লেখার সময় অনুসারে ইতিহাসবেত্তাদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।