ইউনিয়ন পরিষদ: বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক
ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ১৮৭০ সালে গ্রাম চৌকিদারী আইনের মাধ্যমে এর সূত্রপাত হয়, যদিও এর আগে থেকেই বিভিন্ন রূপে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হলেও, কালক্রমে এর ভূমিকা বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে ৪৫৭৯টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
- খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১০০০ অব্দে গ্রাম পরিষদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
- মৌর্য যুগেও গ্রাম প্রশাসনের অস্তিত্ব ছিল।
- ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৭০ সালে লর্ড মেয়ো চৌকিদারী আইন পাস করেন।
- ১৮৮৫ সালে ইউনিয়ন কমিটি গঠন হয়।
- ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়।
- ১৯৫৯ সালে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠন হয়।
- ১৯৭২ সালে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নামকরণ হয়।
- ১৯৭৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নামকরণ হয়।
ব্রিটিশ আমল থেকেই ধীরে ধীরে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বেড়েছে। লর্ড মেয়ো, লর্ড রিপন, এ কে এম ফজলুল হক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের এই প্রতিষ্ঠান গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিভিন্ন কমিটি ও আইনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কাঠামো ও কার্যক্রম পরিবর্তিত হয়েছে।
বর্তমান কাঠামো ও কার্যক্রম:
প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য (৯ জন সাধারণ ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা) নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর। এরা বিভিন্ন স্থানীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, জনসেবা প্রদান (যেমন ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদ ইত্যাদি) এবং স্থানীয় প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত থাকে। সরকারি ও স্থানীয় রাজস্বের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়ন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সরকারি কর্মকর্তা হলেও আংশিক স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে।
ডিজিটাইজেশন:
জনগণের সেবা সহজতর করার উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সেবাকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। www.uniontax.gov.bd ওয়েবসাইট এর উদাহরণ।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন ও প্রশাসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং আধুনিকায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে।