সৈয়দ আলী আহসান (১৯২০-২০০২): একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। ২৬ মার্চ ১৯২০ সালে মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ আলী হামেদ ছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টর এবং মাতা সৈয়দা কামরুন্নেগার খাতুন ছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জমিদার ও পীর সৈয়দ মোকাররম আলীর কন্যা। সুফি ঐতিহ্যে লালিত এই ব্যক্তিত্বটি শিক্ষা, সাহিত্য ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
১৯৩৭ সালে আর্মানীটোলা স্কুলে পড়াকালীন সময়ে তাঁর ‘The Rose’ নামক ইংরেজি কবিতা স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় বাংলা গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় ‘কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যার সম্পাদক নিজে এবং সভাপতি ছিলেন তাঁর জ্ঞাতিভ্রাতা সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং কিছুদিন কলেজে অধ্যাপনা করার পর ১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র কলকাতা কেন্দ্রে যোগদান করেন। তিনি ইলিয়ট ও ইকবালের কবিতার অনুবাদ করেন এবং ইসলামি ভাব ও বিষয়, লেনিন ও অন্যান্য সামাজিক প্রসঙ্গ নিয়ে কবিতা রচনা করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার রিডার এবং বিভাগীয় প্রধান হন।
১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং কলা অনুষদের ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশ সংবিধানের বাংলা ভাষ্য চূড়ান্তকরণ, শিল্পকলা একাডেমীর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদ সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদান রাখেন।
১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।
বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। ২৫ জুলাই ২০০২ সালে তাঁর মৃত্যু হয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।