আলমগীর কবির: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ
আলমগীর কবির (১৯৩৮-১৯৮৯) ছিলেন একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, লেখক ও সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তার জন্ম রাঙ্গামাটিতে হলেও পৈত্রিক নিবাস ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। তিনি হুগলি কলেজিয়েট স্কুল ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন।
লন্ডনে অবস্থানকালে ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘সেভেন্থ সিল’ চলচ্চিত্র দেখে চলচ্চিত্রের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং ডেইলি ওয়ার্কার পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো’র সাক্ষাৎকার নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও জড়িত ছিলেন। প্যালেস্টাইন ও আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। ফরাসি সরকারের কাছে গ্রেফতার হয়ে ৮ মাস কারাবাস ভোগ করেন।
১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন এবং আইয়ুব খানের সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেন। দৈনিক অবজারভার ও সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকাকালীন তিনি একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা সিনে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন এবং ‘আহমেদ চৌধুরী’ ছদ্মনামে ইংরেজি খবর ও কথিকা পাঠ করেন। তিনি ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ নামক একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং ‘স্টপ জেনোসাইড’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তিনি বেশ কয়েকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘মোহনা’, ‘পরিণীতা’, ‘মহানায়ক’ ইত্যাদি। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থও রচনা করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, উত্তরণ-এর জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। আলমগীর কবির বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।